গর্ভবতী মায়ের ত্বকের যত্ন
হবু মায়ের জন্য চাই বিশেষ যত্ন। সেটা যেমন তাঁর খাবার-দাবার ও বিশ্রামে, তেমন তাঁর রূপচর্চার ক্ষেত্রেও জরুরি। সন্তানের ভালোর জন্যই জীবনের বিশেষ এই সময়টাতে নিজেকে ভালো রাখার কোনো বিকল্প নেই। স্বাভাবিকভাবেই নানান শারীরিক পরিবর্তন ঘটে এ সময়। ত্বকের কোনো অংশ কালো হয়ে যাওয়া কিংবা চিরে বা ফেটে দাগ সৃষ্টি হওয়ার (স্ট্রায়া বা স্ট্রেচ মার্ক) সমস্যায় কমবেশি সব অন্তঃসত্ত্বা নারীই পড়েন। এসব সমস্যাকে স্বাভাবিক মনে করা জরুরি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম বখতিয়ার কামাল বললেন, ‘গর্ভাবস্থায় মেছতা বা চুলকানির মতো সমস্যাও হতে পারে। ত্বকে অ্যালার্জিজনিত একজিমা থাকলে এ সময় তা বেড়ে যেতে পারে। স্ট্রেচ মার্কের স্থানগুলোতে ফোসকা পড়তে পারে। চুলকানির পাশাপাশি ত্বকের কোনো অংশ ফুলে যেতে পারে। জন্ডিসের কারণে চুলকানি হলে ত্বকে কোনো র্যাশ থাকে না। সমস্যায় পড়লে চিকিৎসা নিন। আর ত্বকের কালচে ভাব সন্তান জন্মের পর মোটামুটি ছয় মাসের মধ্যে এমনিতেই কমে যায়। তবে কিছু স্ট্রেচ মার্ক রয়েই যায়।’
হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, গর্ভের সময়ের শুরু থেকেই ত্বকের কিছু সমস্যা হতে পারে। কারও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য কমে যায়। চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন কেউ কেউ।
ভালো থাকার জন্য সাধারণভাবে খুব সহজ উপায়ে নিজের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা—
মুখের ত্বক-
নিয়মিত মুখের ত্বক পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার স্ক্রাবিং করতে পারেন। বাড়িতে স্ক্রাব তৈরি করতে ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে আধা কাপ তরল দুধ ও ১ চা-চামচ মধু মেশান। চাইলে মাসে ২ বার পারলারে গিয়ে ফেসিয়াল করতে পারেন। যে সপ্তাহে ফেসিয়াল করাচ্ছেন, সেই সপ্তাহে বাড়িতে স্ক্রাবিং করার প্রয়োজন নেই।
গলার কালচে ভাব-
গলার কালচে ভাব কমাতে বাড়িতেই মাস্ক তৈরি করতে পারেন। ২ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ মসুর ডালের বেসন ও ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করা যায়। সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার এভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
তেল ও ময়েশ্চারাইজার-
গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। পেট, ঊরু ও শরীরের অন্যান্য অংশে ফেটে দাগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই পুরো শরীরেই প্রতিদিন তেল, গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন যে কোনোটি লাগান। সম্ভব হলে দিনে বেশ কয়েকবার তা ব্যবহার করুন।
হাত-পায়ের আলাদা যত্ন-
বাড়িতে হাত ও পায়ে স্ক্রাবিং করতে পারেন। চাইলে পারলারে গর্ভকালীন সেবা (প্রি-ন্যাটাল কেয়ার) হিসেবে ফুট ম্যাসাজ করিয়ে নিতে পারেন। ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর করানো যেতে পারে। প্রতিমাসে একবার এসব সেবা নিতে পারেন।
সতর্কতা-
* বিউটি পারলারে যেসব সেবা নিতে আপনাকে উপুড় হতে হবে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
* বাড়িতে নিজে নিজে পায়ের যত্ন নিতে গিয়েও উপুড় হতে হয়। তাই বাড়িতে অন্য কারও সাহায্য নিন বা এই সেবা নিন পারলারে।
* দীর্ঘ সময় বসে থাকলে অনেকের পা ফুলে যায়। এমন সেবা নেবেন না, যাতে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়।
* সাজসজ্জা বা ত্বকের যত্নের কোনো উপকরণ (তেল, পানি, ফেসপ্যাক ইত্যাদি) মেঝেতে পড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব কারও সহায়তায় পরিষ্কার করে নিন; যাতে আপনি বা অন্য কেউ পিছলে না যায়।
* সাজসজ্জা বা ত্বকের যত্নের কোনো উপকরণ (বা এর বাক্স) ভারী হলে তা নিজে তুলবেন না।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নকশা
ছবিঃ সংগৃহীত