ইন্টারনেট ব্যবহারে সন্তানকে নিরাপদ রাখুন
অন্য সব কিছুর মতো ইন্টারনেটের ভালো-খারাপ দুটি দিকই রয়েছে। আপনি হয়তো ভালো-মন্দের তফাত বোঝেন। কিন্তু আপনার সন্তান ? নেট দুনিয়ায় সন্তানের নিরাপত্তায় কী করবেন পিন্টু রঞ্জন অর্ককে সেটাই জানালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম আহম্মেদ তুষার।
মানুষের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে এনেছে ইন্টারনেট। স্মার্টফোনের কল্যাণে কিশোর-কিশোরীরাও এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। আপনি ভালো-মন্দের তফাত বুঝতে পারলেও আপনার অল্প বয়সী সন্তান তা না-ও বুঝতে পারে। আর কিশোর-কিশোরীরা স্বভাবতই কৌতূহলপ্রবণ হয়ে থাকে। ফলে স্মার্টফোন, ল্যাপটপে বুঝে বা না বুঝে ইন্টারনেটে যেকোনো সাইটে ঢুঁ মারতে চায় তারা। এতে নিজের অজান্তেই নানা বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
কৌতূহলবশত অনেকে ব্লু হোয়েল গেমসের মতো নানা ফাঁদে পা দেয়। সহজেই মিথ্যা প্রপাগান্ডায়, ভুল তথ্যেও বিভ্রান্ত হতে পারে। পর্ন সাইটের মতো নানা সাইটে ক্লিক করে বসে অনেকে। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের অনেকে মনে করে হয়তো জীবনটা এ রকমই! এভাবেই পথ চলতে হয়। এসবের ধারাবাহিকতায় বাচ্চাদের অনেকেই জড়িয়ে যায় সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ ও সম্পর্কে। মানসিক বিকৃতিসহ হতাশারও শিকার হয় তারা। ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্যক্তিজীবনে বা কোনোভাবেই পরিচিত নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে—এমন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে তারা। অনেকের সঙ্গে নিজের একান্ত গোপনীয় তথ্যও শেয়ার করে।
একবার একটা কেইস এসেছিল আমার কাছে। একটি কিশোরী নিজের বাবার বয়সী একজনকে ফেসবুকে যুক্ত করেছিল। প্রথম প্রথম তাদের মধ্যে ভালো ভালো কথাই হতো। লোকটিকে বিশ্বাস করে মেয়েটি ব্যক্তিজীবনের সব কিছু শেয়ার করে তার সঙ্গে। একপর্যায়ে লোকটি মেয়েটিকে নানা রকম অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে। কুপ্রস্তাব পাঠায়। মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
প্রতিকারে করণীয়-
এই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে কিশোর-কিশোরীদের বিরত রাখা কঠিন। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। ওরাও এখন আর পিছিয়ে নেই। তাদের অনেকে ব্যবহার শেষে অনলাইন হিস্টরি মুছে ফেলে। এ ছাড়া হুট করে বাসায় ইন্টারনেট বা কম্পিউটার ব্যবহার বন্ধ করে দিলে হয়তো সন্তান আপনার অজান্তেই বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ব্যবহার করতে পারে কিংবা সাইবার ক্যাফেমুখী হতে পারে।
নেট দুনিয়ায় ভালোর পাশাপাশি খারাপটাও আছে। নিশ্চয়ই চান না, আপনি ইন্টারনেটে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন, আপনার সন্তানও যেন সেগুলোর মুখোমুখি হয়।
সবার আগে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলসহ ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন।
কিছু মোবাইল অপারেটর এখন সেইফ ইন্টারনেট সেবাও চালু করেছে। সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ব্রাউজার থেকে যেকোনো সাইট ব্লকিং ছাড়াও রয়েছে ক্যাটাগরিভিত্তিক ব্লকিং সুবিধা। যেখানে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট, অ্যাডিকশন, ওয়েপন অ্যান্ড ভায়োলেন্স সহ রয়েছে নানা ক্যাটাগরি। এর সুবিধা হলো একটি ক্যাটাগরি ব্লক করে দিলে এ-সংক্রান্ত কোনো সাইটেই আর প্রবেশ করা যাবে না। সন্তানের অনলাইন গতিবিধি নজরে রাখার পাশাপাশি এতে সাইবার বুলিংসহ যেকোনো অনলাইন প্রতারণা প্রতিহত করতে পারবেন।
বকাঝকা করে নয়, সন্তানকে দিক নির্দেশনা দিতে হবে বন্ধুর মতো। ওদের এসবের কুফল বুঝিয়ে বলুন। কম্পিউটার কেন আর অনলাইনেই বা তার করণীয় কী, তা তাকে জানিয়ে দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কী, কেন ও কাদের সঙ্গে কিভাবে কথা বা যোগাযোগের জন্য তা-ও তাকে সুন্দর করে বোঝান। এতে ও ভালোটাই শিখবে।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত