ফ্যাশনে থ্রি-পিসের জয় জয়কার
ঘুরেফিরে ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে বার বার আসে একই পোশাক। কিন্তু প্রতিবারই তাতে কিছু পরিবর্তন ও সংযোজনের ছোঁয়া থাকে। হাল ফ্যাশনে সেই পরিবর্তন নিয়ে আবারও আবির্ভাব ঘটেছে থ্রি-পিসের। ক্রেতার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলোও সেজেছে নজরকাড়া সম্ভারে। তরুণীদেরও পছন্দের শীর্ষে এখন থ্রি-পিস।
হালফ্যাশনে ছিমছাম স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজতে মেয়েদের ভরসায় পরিণত হয়েছিল টপস, ফতুয়া, কুর্তি আর কাতুয়া। মোলায়েম কাপড়ে তৈরি এসব পোশাকের ডিজাইন যেমনই হোক মূল বিষয় ছিল আরামপ্রিয়তা। এরই ভিড়ে কিছু সময়ের জন্য অনুপস্থিত ছিল ট্রেডিশনাল থ্রি-পিস বা সালোয়ার-কামিজ। রং মিলিয়ে ডিজাইন করা ওড়না-সালোয়ার-কামিজের এই তিন পার্ট মিলে একটি পোশাকের ধারণা থেকে কিছুদিন বিরতি নিয়েছিল অনেকেই। কিন্তু ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে আবারও দাপট শুরু হয়েছে থ্রি-পিসের।
ফ্যাশন যেহেতু একটি চলমান ধারা, তাই নিয়ত পরিবর্তন স্বাভাবিক। আজ কুর্তিতে মশগুল তো কাল টপস, ফতুয়া পছন্দের বিষয়, পরশু থ্রি-পিস। সেই ধারায় বর্তমান ফ্যাশনে মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের আবেদন এখন অনেক বেশি। যে কোনো উৎসব-পার্বণে সব বয়সী মেয়ে এখন পছন্দ করছেন সালোয়ার-কামিজ। বরাবরই এর কাটিংয়ে আসছে ভিন্নতা। প্যাটার্নে আসছে নতুনত্ব। উপস্থাপনে থাকছে পরিচ্ছন্নতা। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, চল যেটাই থাকুক না কেন, ফ্যাশনে ভিন্নতা ও নতুনত্ব চায় সবাই। তাই তো কামিজের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নানা ডিজাইনের কটি। রংচঙা এই কটিগুলো মানিয়েও যাচ্ছে বেশ।
গরমের এই সময়ে মেয়েরা সাধারণত সুতি কাপড় পরতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সে কারণে বর্তমানে সালোয়ার কামিজেও প্রাধান্য পেয়েছে সুতি কাপড়। তবে লিনেন কাপড়ের চলটাও অনেক বেশি। তাই গরমের উপযোগী বাহারি কামিজ নিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলোর আয়োজন।
সালোয়ার-কামিজে পুরনো আমলের কামিজের ধাঁচ ব্যবহার করা হলেও থাকছে আধুনিকতা। নানান স্টাইলের কামিজ, সঙ্গে চাপা সালোয়ার বা চুড়িদার। কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে সুতি, সিল্ক, এন্ডি কটন, এন্ডি সিল্ক, হাফ সিল্ক। ওড়নার সাইজ কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গরমেও মেয়েরা পছন্দ করছে লং কামিজ। গেল বছরের মতো এ বছরও থ্রি কোয়ার্টার হাতাই থাকছে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে।
অনেকে আবার গরম থেকে বাঁচতে স্লিভলেসও বেছে নিচ্ছেন। কামিজে কলার দেখা যাচ্ছে না খুব একটা। হাইনেক আর রিনেক গলা চলছে বেশি। সালোয়ারের ছাঁটটা নরমাল থাকলেও ধরনটা একটু চাপা। দৈর্ঘ্যে খাটো বা লম্বা কোনোটাই হবে না। নরমাল ছাঁটের পাশাপাশি চুড়িদার ও ধুতি সালোয়ারও চলছে। তবে এ ধরনের সালোয়ারে কুচি কম থাকছে। পোশাকের জৌলুস বাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে লেইস, চুমকি, পুঁতি, ব্লক, পট্টি, অ্যামব্রয়ডারি, কারচুপি, অ্যাপলিক আর কুচি। সুতির চেয়ে শিফন, মসলিন, হাফ সিল্ক ও পাতলা ভয়েলের ওড়নাই বেছে নিচ্ছেন সবাই।
পাল্লাতে পিছিয়ে নেই খাদি কাপড়ে হালকা হাতের কাজ বা অ্যামব্রয়ডারি। ডিজাইনের পাশাপাশি ফ্যাশন হাউসগুলো পোশাকে ব্যবহার করেছে উজ্জ্বল রং ও উজ্জ্বল রঙের সুতা। এ পোশাকের সঙ্গে চুড়িদার পায়জামা ও সালোয়ার দুটোই সমানভাবে চলছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে দেশীয় বুটিক হাউসগুলো থেকে শুরু করে প্রতিটি শপিংমলের মূল আকর্ষণ এখন সালোয়ার-কামিজ। সময়ের বিবর্তনে এই পোশাকটিই ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনে আবির্ভাব হলেও পোশাকটির আদি নামের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সালোয়ার-কামিজ নামেই এর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কামিজগুলোতে কাটিং, কলার, লে-আউট, ছাপা, ব্লক, বুটিক, বাটিক, লেস ও চুমকির ব্যবহারসহ প্রায় সবকিছুতে ইদানীং ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। আজকের তরুণীরা ট্র্যাডিশনাল পোশাকের পাশাপাশি এই নতুন ধারার ফ্যাশনের সঙ্গে সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয়েই তৈরি হচ্ছে এই পোশাকগুলো।
সালোয়ার-কামিজ কেনার জন্য ক্রেতাদের প্রধান আকর্ষণ থাকে দেশের বুটিক হাউসগুলোর দিকে। বুটিক হাউসগুলো সময়, উৎসব ও ঋতুকে প্রাধান্য দিয়ে পোশাক তৈরি করে থাকে বলেই ক্রেতাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তবে ভারতীয় কাপড়ে জরি, সুতা, পুঁতি, চুমকি, কুন্দন ইত্যাদি দিয়ে নকশা করা সালোয়ার-কামিজের চাহিদাও রয়েছে বছর জুড়েই। দামটাও থাকছে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। রাজধানীর ছোট-বড় সব শপিংমলেই রয়েছে নানা ডিজাইন ও রঙের গরমে উপযোগী সালোয়ার-কামিজের সমাহার। তাই যে কোনো মার্কেটে গেলেই পাবেন আপনার পছন্দের সালোয়ার-কামিজ। তবে আনস্টিচ সালোয়ার-কামিজ ও তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় মার্কেট হচ্ছে ঢাকার গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, ইসলামপুর, বনানী বাজার ও মিরপুর। সব ধরনের কাপড় ও ডিজাইনের পোশাক মিলবে এই জায়গায়।
হাল সময়ের আরেকটি জনপ্রিয় কাপড় হলো লন। পিউর সুতি কাপড়ে সাধারণ ডিজাইনে প্রস্তুত অসাধারণ পাকিস্তানি লন থ্রি-পিস। নারীরা এখন কামিজের জন্য লন ছাড়া আর কিছু যেন ভাবতেই পারছেন না। প্রথমে পাকিস্তানি লন বেশি পাওয়া গেলেও এখন ইন্ডিয়ান লনও পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান লনের দাম চড়া হওয়াতে বর্তমানে দেশেই তৈরি হচ্ছে নানান মানের লনের থ্রি-পিস। এই লনের কোনোটা জর্জেট হাতা আর ওড়না, আবার কোনোটা পুরোটাই সুতি কাপড়ে পাওয়া যাচ্ছে লনের থ্রি-পিসগুলো। সব মিলিয়ে লনের ফ্যাশনটাই থাকবে জমজমাট। কোথাও ঘুরতে যাওয়া, অনুষ্ঠানে যোগদান অথবা বাসায় পরতে থ্রি-পিসের জুড়ি নেই।
রেডিমেড সালোয়ার-কামিজ ফিট নাও হতে পারে। তাই পরিচিত কোনো দর্জির কাছ থেকে কেনার পর ফিট করিয়ে নিন। অনেক সময় এসব সালোয়ার-কামিজের মেটেরিয়ালস ভালো হয় না। তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কেনার আগে সাবধান। কেনার সময় রঙের বিষয়েও খেয়াল রাখুন। কারণ অনেক কাপড়ই একবার ধুলেই রং নষ্ট হয়ে যায়। কোনগুলো পানি দিয়ে ধুতে পারবেন আর কোনগুলো ড্রাইওয়াশ করতে হবে, কেনার সময় ভালো করে দেখে নিন। পুরো সেট মেলানো আছে কি না, কেনার সময় খেয়াল করা জরুরি।
এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে সাজগোজটাও লাগে খুব সাধারণ। চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক আর কপালে একটি মানানসই টিপ যেন ষোলোআনা বাঙালিয়ানা। চুলের সাজ হতে পারে যে কোনো রকম। চুল ছেড়েও রাখতে পারেন আবার বেনিতেও ভালো লাগবে। জুতার ক্ষেত্রে স্লিপার বা হিল দুটোই মানিয়ে যায়। হাতে থাকতে পারে একগোছা চুড়ি। ব্যস, সালোয়ার-কামিজে অনন্য আপনি।
সূত্র ঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন ও সংগৃহীত