কেমন হবে অফিস পোশাক ?

কেমন হবে অফিস পোশাক ?

আজকাল কাজের সঙ্গে অফিসের পোশাক ভাবনা নিয়েও মানুষ অনেক বেশি সচেতন। করপোরেট দুনিয়ায় টিকে থাকতে কাজের দক্ষতা প্রদর্শন যেমন জরুরি একই সঙ্গে নিজেকেও উপস্থাপন করাও জরুরি। তাই সচেতন মানুষ, হাজার ব্যস্ততার মাঝেও নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ঠিকঠিক সংগ্রহে রাখেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনুষঙ্গ কিনতেও ভোলেন না একদম। একজন করপোরেট লেডি যখন বস, তখন তাকে কাজের প্রতি দিতে হয় সর্বোচ্চ মনোযোগ। ঠিক তেমনি ব্যবহৃত অনুষঙ্গের প্রতিও থাকতে হয় সচেতন। নিজেকে এমন নিখুঁত উপস্থাপনে তিনি প্রমাণ করেন সময়, রুচি ও কাজের সংমিশ্রণে নিজেকে কতটা দক্ষ করে তুলেছেন।

 

এখন প্রশ্ন হলো, একজন নারীর এক দিনের নিখুঁত সাজগোজে যে পরিমাণ উপকরণ ও অনুষঙ্গ প্রয়োজন তা প্রতিদিন জোগাড় করা কীভাবে সম্ভব। নিশ্চয়ই এর জন্য তার যথেষ্ট সময় অপচয় হয়। রোজ রোজ টাকাও গুনতে হয় অনেক? অথচ এমন সব প্রশ্নকে সৌন্দর্য পূজারিরা তোয়াক্কাই করেন না। তারা হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রয়োজনীয় কেনাকাটা এক দিনে সেরে নেন। আবার সপ্তাহের একেকটি দিন একেকভাবে সেট করেন। অফিস মিটিংয়ের দিনগুলোর জন্য যে আয়োজন থাকে অন্যান্য দিনের জন্য তার আয়োজন কিছুটা ভিন্ন থাকে। এমনকি পুরো লুকই বদলে যায়। কোনোদিন শাড়ি পরলেন তো কোনোদিন থ্রিপিস। আবার মিটিং ডে তে পরতে পারেন বিজনেস স্যুট। আসলে পোশাকের এই ভিন্নতার বিষয় পুরোটাই নির্ভর করে  কোন দিন কী কাজ করবেন তার গুরুত্বের ওপর। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগ মুহূর্তে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন কোন পোশাকটি পরবেন,  কোন লুক মানাবে আর সাজটাই বা কেমন হবে। ঠিকঠাক লুক পেতে সাজ- পোশাকে একটু স্বাতন্ত্র্যের ছোঁয়া আসবে কীভাবে। কারণ আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের পরিচয়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটাই এখানে মুখ্য। যারা আধুনিক করপোরেট জবে নিয়োজিত তারা বিজনেস স্যুটেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বসন্তের দিনে হালকা গাঢ় যে কোনো রঙের পোশাক মানানসই। বর্ষায় কিছুটা নীলের ছোঁয়া থাকে। এছাড়াও গাঢ় অন্যান্য রং প্রাধান্য পাবে। শরৎ-হেমন্তে পোশাক রীতিতে সবাই একটু উদার হন। গরমের দাপট না থাকায় পোশাকের ফেব্রিক নিয়ে খুব বেশি ভাবায় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে, করপোরেট লুক আনতে গিয়ে যেন আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ভাবটি হারিয়ে না যায়। সুতরাং কোন পোশাকে আপনাকে ভালো লাগবে এবং কোন পোশাকে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন সেটা বিবেচনায় এনে এ সপ্তাহের জন্য চার-পাঁচ সেট পছন্দের পোশাক সংগ্রহে রাখুন।

 

আজকাল অনেক অফিসে ফিউশনধর্মী পোশাকেরও কদর বেড়েছে বেশ। টপস, কুর্তি, জিন্স, ফতুয়াসহ অন্যান্য পোশাকের ভিড় বেড়েছে এই তালিকায়। এ ধরনের পোশাক অফিসেও দেবে রিল্যাক্সিং মুড, পরতেও আরামদায়ক। শুধু তাই নয়, ম্যাচিংয়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। অনুষঙ্গ হিসেবে মেটালিক প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে অফিসেও যারা হিপহপ লুক আনতে আগ্রহী তাদের জন্য এই অনুষঙ্গ উপযুক্ত। অথচ বিজনেস স্যুট, শাড়ি অথবা থ্রিপিসে অনুষঙ্গ ব্যবহারে হতে হবে অত্যন্ত সচেতন। করপোরেট লুকে অফিসে অলঙ্কার পরার ব্যাপারটিই আসল। চওড়া নেকলেস, ঝুলন্ত দুল, বড় আংটি, হাতভর্তি চুড়ি মোটেই মানাবে না। এমন সাজসজ্জায় খুব ছিমছাম তবে ব্রান্ডেড অনুষঙ্গের তুলনা হয় না। খুব বেশি রুচিশীলরা আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের স্টাইলিশ অনুষঙ্গ ব্যবহার করেন। সব সময় সেটি সম্ভব না হলে দেশীয় বাজারের হালকা ও ছোট আকারের অলঙ্কারও উপযুক্ত হবে।

 

মেকআপের ক্ষেত্রে করপোরেট লুকে বাড়াবাড়ি মানায় না। ন্যাচারাল লুকটাই অফিসের জন্য পারফেক্ট। স্কিন টোনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেস হিসেবে হালকা ময়েশ্চার বেসড ফাউন্ডেশন নিতে পারেন। তারপর লুজ ডাস্ট পাউডার দিয়ে দিন। এতে মেকআপ ভালোভাবে সেট হয়ে যাবে। মুখটাও অনেক ফ্রেশ দেখাবে। মেকআপ শেষ হওয়ার পর নো-মেকআপ লুকটিই  যেন আসে। তবে ত্বকের কালো বা ছোপ দাগ ঢেকে যাবে। চোখের নিচের কালো ভাব ও বলিরেখা লুকাবে। চোখের কাজলটি দিতে হবে পছন্দমতো। কালোর পাশাপাশি আজকাল অনেকেই ব্রাউন রঙের কাজল বেছে নিচ্ছেন।  চোখের পাতা বরাবর সরু করে আইলাইনার লাগাতে পারেন, তবে অফিসে যাওয়ার সময় আইশ্যাডো না লাগানোই ভালো।

ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগালে মন্দ লাগবে না। মৌসুমটি শুষ্ক হওয়ায় ব্রাইট গ্লসি হলে ভালো লাগবে।

কর্মজীবী মেয়েদের ব্যাগ একটু বড় হওয়া উচিত। কারণ তাদের ব্যাগে প্রয়োজনীয় কার্ড, কাগজপত্র, নিজের আইডি কার্ড, টিফিন বক্স, পানির  বোতল, ছাতা, সব জিনিস রাখতে হয়। অনেক সময় ল্যাপটপ বহন করতে হয়। তখন ব্যাগটি আরেকটু বড় হতে হবে। জুতা এবং ব্যাগের রং কাছাকাছি শেডের মধ্যে বাছাই করলে দেখতে দারুণ লাগবে। ভালো ব্র্যান্ডের পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন।

অফিসে যাওয়ার সময় একটি জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সেটা হলো জুতা নির্বাচন। তবে জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফ্যাশন বজায় থাকে এবং আরামদায়ক হয় এমন জুতা নির্বাচন করাই ভালো। তাছাড়া শব্দ সৃষ্টি হয় কর্মক্ষেত্রে এমন জুতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। নিজের মানানসই লুকের দিকে একটু সচেতন থাকলেই আপনি সহজে অফিসের সাজের জন্য নিজেকে পারফেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

 

উপযুক্ত লুক পেতে কিছু পরামর্শ-

- অফিসে যোগদানের আগে দেখে নিন বেশির ভাগ কর্মচারী কী ধরনের  পোশাকে অফিস করে। কিছু করপোরেট অফিসের পরিবেশে বিজনেস স্যুটই প্রচলিত। আপনার প্রাথমিক পোশাক বাছাইপর্বও হতে হবে এই ভিত্তিতে।

- খেয়াল রাখবেন অফিসের পোশাক যেন রং, ডিজাইন বা কাটের দিক দিয়ে উগ্র বা লাউড না হয়।

- অফিসে জবড়জং গয়না একদমই মানায় না। ছোট পাথর বা হীরে বসানো  প্লেন আংটি অনেক বেশি শোভনীয়।

- জুতা এবং ব্যাগ বাছাইয়ে মার্জিত রুচির পরিচয় ধরে রাখা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া এই দুইয়ের রং কাছাকাছি শেডের মধ্যে হলে ভালো হয়।

- করপোরেট নারীর কিছু বিষয়ে অনেক বেশি সতর্কতা থাকা প্রয়োজন। বড় গলার জামা, উগ্র কটকটে রঙের পোশাক, পাতলা ফিনফিনে শাড়ি বা জামা, রং ফিকে হওয়া পোশাক, ময়লা কিংবা ছেঁড়া পোশাক একদমই পরিধান করা উচিত নয়।

- করপোরেট লুক আনতে যুগোপযোগী ফ্যাশনেবল ড্রেসকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

- অফিসে যাওয়ার সময় হালকা মেকআপই যথেষ্ট। খুব ভারি সাজগোজ একদমই মানায় না।

ব্যস্ত সময় কর্মক্ষেত্রে পোশাক নিয়ে হয়তো অনেক নারীই মাথা ঘামান না। আবার অনেক নারী বুঝে উঠতে পারেন না অফিসে কেমন পোশাক পরা উচিত। অনেকে বেশি স্মার্ট হতে গিয়ে বেমানান পোশাক পরে নিজেকে সমালোচনার পাত্রী বানান। তাই প্রথমেই মাথায় রাখা দরকার, যে পোশাকটি আরামদায়ক নয় এমন পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। অবশ্যই পোশাকটি এমন হওয়া উচিত যাতে আরাম হয়। কারণ একই পোশাকে আপনাকে থাকতে হচ্ছে অনেকটা সময়।

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন