কিশোরীর ক্যাজুয়াল পোশাক
বাইরে গেলে বিস্তর ভাবতে হয় পোশাক নিয়ে। কিশোরী বয়সে এ ভাবনাটা কম নয়, বরং বেশি বেশিই। কিন্তু ঘরে? ঘর, বারান্দা বা ছাদে হাঁটাহাঁটি করার সময়ও এই বয়সের পোশাকে থাকা চাই আরাম ও ফ্যাশন। আর তাই বাড়িতে ঢিলেঢালা টপ, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, স্কার্ট পরতে দেখা যায় কিশোরীদের।
দেশালের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ইশরাত জাহান বলেন, ঘরের পোশাক হতে হবে খুব আরামের। খেয়াল রাখতে হবে যে কাজই করুক না কেন, পোশাকটি যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে।
ছবি: সুমন ইউসুফশরৎ মাথায় রেখে তরুণ বা কিশোরীদের জন্য নানা ধরনের পোশাক বানিয়েছে কে ক্র্যাফটের ব্র্যান্ড ইয়ং কে। এর ডিজাইনার শায়লা নূর জানালেন, কিশোরীদের জন্য প্যাটার্নভিত্তিক পোশাক বেশি তৈরি হয়। এখন এমব্রয়ডারি বা হাতের কাজ কম রেখে হালকা ফ্রিল দিয়ে বা লেইস যোগ করে প্যাটার্নটা একটু অন্য রকম করা হচ্ছে।
ভিন্নধর্মী মানে পশ্চিমা ঢঙের সঙ্গে দেশীয় ধাঁচের মিশেলে ফিউশন। এ ছাড়া নানান রকমের বোতাম, লো কাট, হাই কাট, আঙরাখা কাট দিয়েও পোশাক ভিন্ন করা হচ্ছে। আর চলতি ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ নকশাও আছে হাতা ও গলার নকশায়। শোল্ডার ড্রপ, ফিশ কাট, এলিফ্যান্ট কাট, টিউলিপ কাটসহ বিভিন্ন রকম হাতার ডিজাইনগুলো কিশোরীদের পোশাকে ভিন্ন মাত্রা যোগ করছে।
ঘরে পরা যায় ঢিলেঢালা শার্ট ও প্যান্টতা ছাড়া আরামের ব্যাপারে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা ঘরের পোশাকগুলো এমন হয়, যেন সেটা বাসার ধারেকাছেও পরে যাওয়া যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। এর মধ্যে কাপ্তান, রুমাল ছাট, পাঞ্জাবি কাট, কুর্তি কাটের ঢিলেঢালা টপও আছে।
বাইরে বের হওয়ার পোশাক হিসেবে পালাজ্জোর চলটা এখন মাঝামাঝি পর্যায়ে, তবে ঘরে এখনো জনপ্রিয় পালাজ্জো। কারণ, এটা ঢিলেঢালা। এ ছাড়া রাউন্ড কাটের প্যান্ট খুব চলছে। খাটো টপের সঙ্গে টিউলিপ প্যান্ট বা ধুতি প্যান্টও পরা যায় বাসায়।
ইশরাত জাহান মনে করেন, কিশোরীদের ঘরে পরার পোশাক হিসেবে টি-শার্ট ও ট্রাউজার সবচেয়ে ভালো। এই সময়ের কিশোরীরা এ রকম পোশাক পরতে বেশি স্বচ্ছন্দ। আবার পাঞ্জাবির সঙ্গে টার্কিশ বা হেরেম পায়জামাও পরা যায়। এই পায়জামার কাট কিছুটা ভিন্ন আর ঢিলেঢালা হয়ে থাকে। পায়ের গোড়ালির কাছে ইলাস্টিক দেওয়া থাকে এবং পায়জামার কোনো দিক থেকেই টান অনুভূত হয় না। এই বয়সের মেয়েরা যেহেতু সাধারণত একটু দৌড়ঝাঁপ করেই চলাফেরা করে, তাই এমন পোশাক তাদের জন্য আরামদায়ক হবে।
টপের সঙ্গে পালাজ্জোস্কার্টও কিশোরীদের ঘরের পোশাক হিসেবে আরামদায়ক। চলতি ধারার স্কার্টের মধ্যে রয়েছে বোহেমিয়ান বা জিপসি স্কার্ট। যেগুলোর ঘের ও কুঁচি বেশি থাকায় খাটো টপের সঙ্গে ভালো মানায়। টপের হাতা হতে পারে থ্রি কোয়ার্টার, বেলবটম কিংবা হাতা কাটা। গলা হতে পারে গোল, বোট নেক, ছোট কাটের হাই নেক।
ডিজাইনারদের পরামর্শ—চলতি ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে হাতা বা গলার কাজ হওয়া উচিত। এ ছাড়া বাসায় পরার জন্য নিট বা গেঞ্জি কাপড়ের টি-শার্ট বা লম্বা কুর্তা খুব আরামদায়ক।
ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ের তরুণনির্ভর শাখা তাগা কিছুটা ভিন্ন রকম পোশাক তৈরি করে। সেখানেও মিলবে ঘরে পরার উপযোগী নানা ধরনের টপ ও বটম। তাগার জ্যেষ্ঠ ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক অপরাজিতা সরকার জানালেন, তাগার পোশাকগুলো তৈরিতে আরামদায়ক কাপড় গুরুত্ব পায়। এখন আবহাওয়া যেহেতু গরম, তাই কোন কাপড় ও পোশাক বেশি স্বচ্ছন্দের, সেদিকে নজর তাগার। আরামের সঙ্গে হাল ফ্যাশন ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশও পোশাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
হাল ফ্যাশনের স্কার্ট ও টি–শার্টে ক্যাজুয়াল ভাবএখন লম্বা বা খাটো কটি, হাতা কাটা কটি চলছে যেগুলো হালকা ডিজাইনে তৈরি। ঘরে ওড়নার বদলে কিশোরীরা একটা কোটি পরলেই স্মার্ট দেখাবে।
তাগাতে বর্তমানে ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন ড্রেস’ খুব চলছে বলে জাগা গেল। যে পোশাকের কাট লম্বাটে, অনেকটা গাউনের মতো। পশ্চিমা ধারার ক্রপ টপ, ব্যাগি টপের সঙ্গে হালকা এমব্রয়ডারির কাজ করা থাকে।
ঢাকা কলেজের বিপরীতে নূরজাহান মার্কেটের নিচতলায় কিশোরীদের পোশাক কেনাকাটার জুতসই একটি জায়গা। সেখানে ঘুরে দেখা গেল, ঘরে পরার জন্য নতুন বেশ কয়েক রকমের পোশাক এসেছে। লিনেন কাপড়ের পঞ্চো যার কাটছাঁট অনেকটা কাপ্তানের মতো। এ ছাড়া আছে এম্বোস কটন বা স্লাব কটনের ফতুয়া যার সামনের দিকে কিছুটা এমব্রয়ডারির মতো কাজ করা থাকে। এই বাজারের ১৬ নম্বর দোকানের এক বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, পাপা জর্জেটের কোল্ড শোল্ডারের টপ কিশোরীরা বেশি পছন্দ করছে। এ ছাড়া লম্বা শার্ট, তিন কোনা কাটের ছোট্ট কোটি, ঝুমকা টপ, সুইস কটন কাপড়ের পমপম ফতুয়া আছে কিশোরীদের চলতি ফ্যাশনে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো