ঈদ পোশাকের সাথে গয়না
বড় গয়নার ট্রেন্ড চলছে। পুরনো নকশাগুলোই ঘুরেফিরে এসেছে নতুনরূপে। কিছু ক্ষেত্রে আদি নকশার মূল থিম একই রকম থাকছে। কিছু গয়নাতে আবার পুরনো নকশার সঙ্গে আধুনিক মোটিফের সমন্বয়ে ঘটেছে। ধাতব গয়নার উপকরণে রুপা এ বছরও তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে সমানতালে। রুপার নিজস্ব রুপালি রং আর অক্সিডাইজ করা দুটোই ট্রেন্ডি। রুপা ছাড়া অন্যান্য ধাতব গয়নাও চলছে। পিতল, ব্রোঞ্জ, ব্রাস মেটালের গয়নায় মুক্তা, পুঁতি, বিডস, স্টোন ইত্যাদি দিয়ে নকশা করে নতুনত্ব আনা হচ্ছে।
পশু-পাখি, ময়ূর, প্রজাপতি, ফুল-পাতার নকশা, প্রাকৃতিক নানা মোটিফের পাশাপাশি জ্যামিতিক মোটিফে ডিজাইন হয়েছে ঈদের গয়না। গলার হার ও কানের দুলের সেট, লম্বা মালা বা চেইন, চোকার, সীতাহার, নেকলেস, লকেট সেট, বালা, চুড়ি, কানের দুল, আংটি, বাজু, পায়েল ব্রেসলেট, খোঁপার কাঁটাসহ রয়েছে সব ধরনের গয়না। চাঁদনিচকের আদি গয়না ঘরের স্বত্বাধিকারী অমিত সরকার জানান, ‘রুপা ও মেটাল গয়নার চাহিদা ছিল সব সময়ই, এখনো আছে। তবে আগে মেটাল গয়নায় সোনার প্রলেপ দেওয়া গোল্ড প্লেটেড গয়না জনপ্রিয় ছিল। এখন রুপালি বা অক্সিডাইজ গয়নার চাহিদা বেশি।’ এবার ঈদ যেহেতু গরমে, তাই ভারী গয়নার ভিড়েও সমানভাবে চলছে হালকা গয়নার বেচাকেনা। মার্কেটগুলোতে পুঁতি, কাঠ, পিতল, কড়ি, ঝিনুকের শেল, সুতাসহ নানা ধরনের গয়না আর চুড়ির পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। নব্য ফ্যাশনের হাল ধরতে ফ্যাশন ডিজাইনাররাও ধাতব গয়নার সঙ্গে কাঠ, সুতা, কড়ি, বোতাম, কাগজ, কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের গয়না নিয়ে হাজির হয়েছেন। কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেসের গয়না ডিজাইনার লাইলা খায়ের কনক বলেন, ‘পছন্দের ভিন্নতা হতেই পারে। সেটা ব্যক্তি মানুষের ওপর নির্ভর করে। তাই খাঁটি দেশীয় রুপা থেকে শুরু করে মেটাল, পুঁতি, বিডস, স্টোনসহ বিভিন্ন ধরনের গয়না রেখেছি ঈদে। রুপালি গয়না এখন খুব ট্রেন্ডি। সঙ্গে বিভিন্ন স্টোনের গয়নাও চলবে এবার।’
যাঁদের ধাতুতে অ্যালার্জি আছে তাঁদের জন্য সুতা বা ফ্যাব্রিকসের গয়না ভালো বিকল্প। সুতা দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে চুড়ি ও গলার মালা। সুতার সঙ্গে বিভিন্ন ধাতব নকশাও থাকছে। ছোট-বড় ধাতব লকেটেও ঝোলানো হয়েছে রঙিন সুতা। এ ছাড়া ন্যাচারাল ডাই, মখমলসহ বিভিন্ন ফ্যাব্রিকসের লম্বা মালা, চন্দ্রহার, সুতার কাজ করা গলার হার ও কানের দুলের পসরা দেখা গেছে। আরো আছে কাঠের ওপর হ্যান্ড পেইন্ট ও বিভিন্ন রঙের বিডস দিয়ে তৈরি গয়না। সব পোশাকের সঙ্গেই মিলিয়ে কেনা যাবে ছিমছাম আরামদায়ক এসব গয়না। আর দামেও রুপা বা মেটাল গয়নার তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ায় পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনতে বাজেট নিয়ে তেমন ভাবতে হবে না।
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানালেন ঈদে কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন গয়না মানাবে। বললেন ‘এক পোশাকের সঙ্গে সব ধরনের গয়না পরার চল নেই এখন আর। উত্সবের লুক ফুটিয়ে তুলতে বড় একটি গয়নাই যথেষ্ট। ঈদের কামিজ সাধারণত একটু নকশাদার হয়, তাই গলা বা কানে যেকোনো একটি গয়না বেছে নিন। চুড়িদারের সঙ্গে পায়ের নূপুর কিংবা আংটিও ভালো দেখাবে। শাড়ির সঙ্গে কানে দুলের বদলে গলায় চোকার বা ভরাট একটি নেকলেস পরতে পারেন, সে ক্ষেত্রে কানে ছোট কানপাশা পরুন।
অথবা কানে বড় ঝুমকা বা দুল পরলে গলা খালি রাখুন। পোশাকের সঙ্গে গয়না বাছাইয়ে বোহেমিয়ান ও ভিক্টোরিয়ান লুক পছন্দ করছে তরুনীরা। তাই কুর্তির সঙ্গে চলতে পারে চওড়া ব্রেসলেট কিংবা গলায় সরু লম্বা মপচেইন অথবা ঝোলানো মালা। শার্ট বা টপসের সঙ্গে চোকার জাতীয় নেকলেসও দারুণ মানাবে। জিন্স আর টপসের মতো পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে সনাতনী দেশি গয়না পরেই বোহেমিয়ান লুক ফুটিয়ে তুলছে মেয়েরা। টপস যদি হয় গলাবন্ধ বা হাইনেক, তাহলে পরুন সরু লকেট। হাতে মানানসহ কয়েকটি চুড়ি-বালা মিলিয়ে পরুন। তবে এটি দুই হাতের চেয়ে এক হাতেই বেশি মানাবে। বালা কিংবা ব্রেসলেট তামা, ব্রোঞ্জ, লোহা, কাঠ এমনকি মাটির হলেও দারুণ লাগে। বিডসের ব্রেসলেটও ভালো লাগবে। যেহেতু এক হাতে পরছেন, তাই একটি না পরে, একসঙ্গে কয়েকটি পরতে পারেন।’
সূত্র ও ছবিঃ দৈনিক কালের কন্ঠ