বর্ষার সাজ-পোশাক কেমন হবে ?
বৃৃষ্টির মৌসুম মানেই সাজপোশাক আর ব্যবহৃত অনুষঙ্গের নানা বাছবিচার। এ সময় যতই বৃষ্টি হোক না কেন আপনার চাওয়া থাকে, চলাফেরা হোক নির্বিঘ্নে। আর সে জন্যই কোন পোশাকটি পরবেন, কেমন করে সাজবেন, আপনার পায়ের জুতা, ব্যবহৃত অনুষঙ্গ এমনকি বৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচতে হাতে থাকা ছাতাটাই বা কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতে হয় বিস্তর।
কেমন রং এবং কাপড়ের পোশাক পরবেন ?
এক্ষেত্রে সাবেকি কিংবা আধুনিক যাই হোক না কেন, বর্ষার ট্রেন্ড বুঝে পরা উচিত। রংবাহারি শাড়ি বর্ষায় মন ভালো করে দিতে পারে সহজেই। এ জন্য রংটাকে প্রাধ্যন্য দেওয়া উচিত। যেমন, মেজেন্টা, বেগুনি, গাঢ় সবুজ বা কলাপাতা সবুজ, নীল, লাল, হলুদ রংগুলো দারুণ লাগবে। অন্যান্য রঙের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন ব্রাউন, নেভি ব্লু, রেড, মেরুন, অলিভ।
কাপড়ের ক্ষেত্রে পাতলা বুননের সুতি, মিশ্র সুতি অথবা পলিনাইলনের পোশাক বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া জর্জেট, সিল্ক কিংবা দেশি ভয়েল কাপড়ের পোশাক বেছে নিতে পারেন। তবে, রেয়ন, শিফন, ক্রেপ, জর্জেট অথবা সিল্কের কাপড় ভিজে গেলে অথবা কাদা লেগে গেলে ধুয়ে নিতে পারেন, সহজেই শুকিয়ে যাবে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী কাতান, সিল্ক, কোটা, জামদানি, মসলিন, জর্জেট, শিফনের শাড়ির পাশাপাশি পাকিস্তানি বারিজ শাড়িও সবার সামনে উপস্থাপন করছি। মডার্ন টাইডাই ফেব্রিকও সেই তালিকা থেকে বাদ যায় না। এসব শাড়িতে করা হয়েছে কুনদন, জরি, কারচুপি, নেডলেস, ফ্রিল ওয়ার্ক, ফ্লোরাল প্রিন্টের কাজ। এ ছাড়া কয়েক ধাপের কাপড়ে সাজানো কুচার ট্রেন্ডি ওয়্যারগুলোও তরুণীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। পার্টিতে যেমন ট্রেন্ডি তেমনি সব সময়ও পরিধান করা যায়।
রাজধানীর যে কোনো শাড়ির দোকানে পাওয়া যাবে কম খরচে নানা রং, নানা ঢং আর নানা দামের জর্জেটের শাড়ি। এ সময়ে শাড়ি অপেক্ষা সালোয়ার-কামিজ বেশি আরামদায়ক। শাড়ি পরলে পাতলা সিল্ক এবং মসলিনের শাড়ি পরতে পারেন। আর যারা সালোয়ার-কামিজ পরেন তারা ঢিলেঢালা সুতি বা সিনথেটিক কাপড়ের কামিজ পরতে পারেন। মনে রাখবেন, ডেনিমের কাপড় বর্ষার ট্রেন্ড নয়। এ সময় চলতি পথে কাদার ঝামেলা পোহাতে খুব বেশি নিচু বা পায়ের কাছে পড়ে এমন প্যান্ট, ট্রাউজার বা সালোয়ার এড়িয়ে চলা উচিত। এ সময় বেশি লং কামিজ না পরে একটু শর্ট টপস, ফতুয়া বা কুর্তা পরলে ভালো হবে। কারণ এ সময়ের প্রতিটি পোশাকের উদ্দেশ্য একই, বৃষ্টিতে ভিজলেও যেন দ্রুত শুকানো যায়।
বর্ষার সাজ-
প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে মেকআপ যেন ওয়াটারপ্রুফ হয়। বর্ষায় দিনে হালকা আর রাতে লাল, কফি, মেরুন, বাদামি, বেগুনি, পিচ রঙের লিপস্টিকে জমকালো দেখাবে। এ সময় ফাউন্ডেশন বাদে মেকআপের সব উপকরণই হওয়া চাই শুকনো বা ম্যাট।
মেকআপের শুরুতে বরফ কুচি মুখে ঘষে নিন। তারপর মুখ শুকিয়ে নিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার ও ভালো মানের কোনো বেবি পাউডার সামান্য একটু মিশিয়ে মুখে ভালোমতো পাফ করে নিতে হবে। রাতের কোনো দাওয়াতে ব্লাশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, তা যেন কোনোমতেই ক্রিমি না হয়। হালকা রঙের ম্যাট ব্লাশন গালে অল্প করে বুলিয়ে নিতে পারেন। চোখে আইশ্যাডো ব্যবহার না করে আই পেনসিল লাগিয়ে সেটাই আঙ্গুল বা ব্রাশ দিয়ে মিশিয়ে নিতে পারেন। রঙের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন সবুজ, নীল, বেগুনি, বাদামি অনেক রং। হাইলাইট করার জন্য ত্বকের চেয়ে একটু হালকা টোনের কমপ্যাক্ট পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন। ভ্রুঘন দেখাতে বাদামির সঙ্গে একদম অল্প পরিমাণ কালো রঙের আইশ্যাডো মিশিয়ে ব্রাশ দিয়ে এঁকে নিতে পারেন। সাজে জমকালো ভাব আনতে যে কোনো গাঢ় রঙের লিপস্টিক আর পাপড়িতে ঘন মাশকারার দিকে জোর দিন। এ দুটি জিনিসই মুখ আকর্ষণীয় করে তুলতে যথেষ্ট।
বাহারি ছাতার দিন-
বর্ষার মৌসুমে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ছাতা কেনা যায়। এটা রুচির বড় পরিচায়ক। এখন বাজারে বাহারি সব রকমের ছাতা পাওয়া যায়। যা দেখতে বেশ সুন্দর এবং অনায়াসে বহনযোগ্য। এ ছাড়াও মানসম্পন্ন ফ্যাশনেবল ফোল্ডিং বাজারে পাওয়া যায়।
মার্কেটে দেশি ব্র্যান্ডের শরীফ ছাতা, মদিনা ছাতা, বঙ্গ ছাতা, ভাই-ভাই ছাতা ও বায়েজিদ ছাতা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া অ্যাটলাস, ইউনিক, অলিম্পিক, ফিলিপস, চেরি, ফুজি প্রভৃতি বিদেশি ব্র্যান্ডের ছাতারও বেশ চাহিদা। বাজারভেদে ছাতার দাম ওঠানামা করে থাকে। নিউমার্কেট-গাউছিয়া এলাকায় প্রিন্টেড কিংবা রঙিন ছাতা পাওয়া যায় সুলভমূল্যে।
এক ফোল্ডারের ছাতার দাম ১৫০-৪০০ টাকা। দুই-তিন ফোল্ডারের ছাতার দাম ২০০-৩০০ টাকা। আর বাজারে চার ফোল্ডারের পার্স ছাতার দাম সবচেয়ে বেশি, যা শুরুই হয় ৩০০-৩৫০ টাকা থেকে। একরঙা ছাতার চেয়ে প্রিন্টেড ছাতার চাহিদা এখন বেশি। তাই বছরের শুরুর দিকে একরঙা আর প্রিন্টেড ছাতার দাম বেশি থাকলেও এখন প্রিন্টেড ছাতার দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। ফ্যাশন অনুষঙ্গের সঙ্গে মানিয়ে ঝালর বসানো ছাতা কিনতে চাইলে তার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে ২৫০-৫০০ টাকা।
বর্ষার জুতো-
বর্ষার দিনে আপনার চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে পায়ে থাকা জুতাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হতে হবে আরামদায়ক। একই সঙ্গে কাদা পানিতে যেন সহজে নষ্ট না হয় তেমনি উপযোগী জুতা বেছে নিতে হবে। হাতে থাকা ঘড়িটি অবশ্যই পানিরোধী হওয়া উত্তম। আজকাল অনেক মুঠোফোনই পাওয়া যায় পানিরোধী। আপনার ফোনটি যদি এমন নাও হয় অন্তত পানিরোধী ব্যাগ ব্যবহার করুন, যাতে সঙ্গে থাকা প্রয়োজনীয় জিনিসের সুরক্ষা দেয়। আবার এমন ব্যাগ বর্ষায় সহজে নষ্টও হয় না।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত