কর্মক্ষেত্রে কর্পোরেট লুক

কর্মক্ষেত্রে কর্পোরেট লুক

এক যুগ আগেও অফিসপাড়ার মেয়েদের কেবল শাড়ি কামিজে দেখা যেত। সেই ট্রেন্ডের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে করপোরেট ফ্যাশনও। ফুল ফরমাল থেকে স্মার্ট ক্যাজুয়াল সে কথাই বলছে। তবে ট্রেন্ডে যতই হাওয়া বদল হোক শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের আবেদন কিন্তু এখনো কমেনি। কেবল বদলেছে সময়ের সঙ্গে সাজ পোশাকের পরিবর্তন। 

 

 

নারীর এই অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার। সকালের আলো ধরণির বুকে মাথাচারা দিয়ে উঠলেই কী পোশাকে অফিস করবে, পরের দিনের প্রস্তুতিটা কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতে হয় প্রতিটি নারীকেই। এর অবশ্য একটি সরল অঙ্ক হিসাব কষলেই উত্তরটি মিলে যাবে। অর্থাৎ আপনি যদি আগে থেকেই জানেন, পরদিন আপনার কাজের তালিকায় কী কী আছে? যেমন- কোনো বিশেষ মিটিং, অ্যাপয়েন্টমেন্ট, দাওয়াত বা বিশেষ কোনো প্ল্যান! আর সে অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করে নিতে পারবেন খুব সহজেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেন, পোশাকের জন্য আপনার কাজে কোনো প্রকার বাধা না আসে। আর ঠিক যে ধরনের পোশাকে আপনি বেশি স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তা-ই পরুন।

 

ফ্যাশন ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। একই কথা খাটে করপোরেট ড্রেস কোডের ক্ষেত্রেও। 

 

আমাদের দেশে অফিসের মেয়েরা এখনো সালোয়ার কামিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে এর পরিবর্তে লং কুর্তা ও প্যান্টও পরছেন অনেকে। আবার অনেক মেয়ে আছেন, যারা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরলেও ফরমাল প্যান্ট-শার্ট পরেন, কিন্তু জিনসের প্যান্ট খুব একটা পরতে চান না। এই ধারাও বদলেছে। এখন মেয়েরা জিনস প্যান্ট পরছে তাও আবার টপসের সঙ্গে। তবে এখনো ক্রপ টপ বা ছোট পোশাক আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়। তাই এমন পোশাক কেউ পরেন না। আবার শার্ট-প্যান্ট পরলেও ইন করার অভ্যাসটা মেয়েদের খুব একটা নেই, শার্টটা এখনো অনেকে বাইরেই রাখেন। কিন্তু ইদানীং করপোরেট ফ্যাশনে কিছুটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তা ছাড়া এখন মেয়েরা অফিসের আউটফিট হিসেবে শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের তুলনায় কুর্তা কামিজে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। অন্যদিকে, সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে বড় একটা ওড়না থাকে, যা দেখতে খুব ভালো  লাগে। আসলে আজকালের মেয়েদের পোশাকরীতি শিথিল হয়েছে। বেশ কটি বহুজাতিক সংস্থায় অনেকে এখন শার্ট-প্যান্ট পরে যাচ্ছেন না। কখনো কখনো পোলো শার্টও পরে যাচ্ছেন। সঙ্গে ফরমাল জিনস বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। তবে বিজনেস স্যুট পরা মেয়েদের সংখ্যা এখানে নেহায়েতই কম। অনেক মেয়ে অফিসে শাড়ি পরে আসেন। বাংলাদেশে শাড়ি ফরমাল ড্রেস হিসেবে পরা হয়। মিটিং বা ইভেন্টে শাড়ি পরে আসেন অনেক কর্মজীবী নারী।

 

ফ্যাশন ট্রেন্ড যতই বদল হোক, একটি কথা মনে রাখতে হবে। বাঙালি মেয়ে বাঙালি পোশাকেও একই রকম আধুনিক। তবে আপনি যদি পাশ্চাত্যের পোশাকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন, তাহলে কিছুটা ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন। দেখতে ভালো দেখাবে। আর অফিসের জন্য পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বিষয় সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, পোশাক হতে হবে এলিগেন্ট, কিন্তু জমকালো নয়। পোশাকের ফিটনেস, কাট, প্যাটার্ন ও স্টিচিং হতে হবে নিখুঁত। পোশাক প্রিন্টেড না হয়ে সলিড রঙের হলেই বেটার। তবে হালকা রঙের ওপর ছোট ছোট প্রিন্ট মন্দ নয়। কিন্তু অতিরিক্ত রঙিন বা বড় বড় ছাপার পোশাক অফিসের জন্য মোটেও মানানসই নয়। একইভাবে হালকা রঙের পোশাকে স্ট্রাইপ চেকের ডিজাইনও খারাপ নয়, ট্রেন্ডি লাগে। মনে রাখবেন, প্রয়োজন অনুযায়ী সবকিছুরই বদল ঘটে। তাই অফিশিয়াল আউটফিট যে কেবল ফরমালই হতে হবে, সেটারও কোনো যুক্তি নেই। আপনার আরাম আর পেশাদারিত্বের  কথা মাথায় রেখে অফিসের আউটফিট নির্বাচন করা উচিত।

 

সব সমই সামনের দিকে ঢাকা সামান্য হিলওয়ালা জুতা অর্থাৎ পাম্প হিল ব্যবহার করুন। যদি হিলে সমস্যা থাকে, তাহলে লোফার ব্যবহার করতে পারেন। চামড়ার জুতোয় আপনার পোশাকের আভিজাত্য এমনিতেই এক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। হাতে সব সময়ই মানানসই ঘড়ি পরবেন। এতে দেখতে যেমন স্মার্ট লাগবে, তেমনি আপনার পোশাকের পেশাদারি ভাবটিও ফুটে উঠবে। আর ব্যাগের ব্যাপারে বলতে চাই, টোট ব্যবহার করুন। এটি একদিকে যেমন বেশ অনেক জিনিস একসঙ্গে এঁটে যাবে, তেমনি ব্যবহারেও সুবিধা হবে। আজকাল প্রায়ই পার্টিতে সোজা অফিস থেকেই যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেকআপ, একটা জমকালো স্টোল অনায়াসেই এই ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়া যাবে। এ ছাড়াও অফিসে গয়না পরার ক্ষেত্রে ছোট ছোট গয়না পরা ভালো। জুতা এবং ব্যাগের রং কাছাকাছি কোনো শেডের মধ্যে বাছাই করলে দেখতে দারুণ লাগবে।

 

অফিসের সাজ সবসময়ই হালকা হওয়া উচিত। অফিসের সাজের ক্ষেত্রে মুখে হালকা ফাউন্ডেশন এবং ফেসপাউডার ব্যবহার করলে ভালো লাগবে। চোখে মাশকারা, কাজল বা আই লাইনার আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগালেই আপনার অফিসের সাজ পূর্ণতা পাবে। সুগন্ধি ব্যবহার করতে ভুলবেন না। ভালো কোনো ব্র্যান্ডের ডিউডোরেন্ট বা পারফিউম ব্যবহার করুন।

 

 

 

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন

ছবিঃ সংগৃহীত