বর-কনের বিয়ের প্রস্তুতি
বিয়ের অনুষ্ঠান তিন-চার দিনে শেষ হয়ে গেলেও এর প্রস্তুতি কিন্তু চলতে থাকে অনেক দিন থেকেই। বিয়ের মূল কেন্দ্রে থাকেন বর-কনে, তাই তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। বিয়ের দিনটিতে সবাই চায় তাঁকে সুন্দর দেখাক। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য তাই রূপচর্চার প্রস্তুতিও শুরু করে দেওয়া উচিত অনেক দিন আগে থেকেই।
রূপবিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময় খুঁটিনাটি সব বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে বিয়ের কাজগুলো দায়িত্বশীল কয়েকজনের হাতে ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। মাথায় দুশ্চিন্তা থাকলে তার প্রভাব পড়বে চেহারাতেও। এ জন্য নিজের রূপচর্চা ও শারীরিক পরিচর্যার কাজটি বিয়ের কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু করে দেওয়া প্রয়োজন।
বর ও কনে কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা ও কাজী কামরুল ইসলাম।
কাজী কামরুল ইসলাম মনে করেন, নিজেদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিয়ের আগেই বর-কনেকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে রূপচর্চাবিষয়ক পরামর্শ নিতে হবে। ব্যস্ততার কারণে হয়তো দুই-এক মাস আগে থেকে সময় বের করে নিয়মিত রূপচর্চা করা সম্ভব নয়।
গায়েহলুদের অনুষ্ঠান দিয়েই সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি গায়েহলুদের এক বা দুই দিন আগে থেকেই শুরু করতে হবে। রাহিমা সুলতানাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
চুল-
বিয়ের একদম আগে বর বা কনের চুলের কাট বা রং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত নয়। কারণ চেহারার সঙ্গে তা মানিয়ে যাওয়ার একটি বিষয় আছে। তাই অন্তত সাত দিন আগে এই কাজগুলো সেরে ফেলা উচিত।
ওয়্যাক্স ও থ্রেডিং-
হলুদের অনুষ্ঠানের আগে এগুলো শেষ করে ফেলতে হবে। তবে অনেকেরই দ্রুত লোম গজানোর প্রবণতা থাকে। তাই দরকার হলে অনুষ্ঠানের আগের দিন ওয়্যাক্স ও থ্রেডিংয়ের কাজ করা উচিত।
ছেলেদের কানের কাছের লোমও ওয়্যাক্স করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন কাজী কামরুল ইসলাম।
ফেশিয়াল-
বিয়ের কয়েক দিনে মেয়েদের ত্বকের ওপরে মেকআপের বড় রকমের একটা ধকল যায়। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে নয় বরং পরেই ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন বুঝে ফেশিয়াল করিয়ে নিতে হবে। গায়ে হলুদের আগে ত্বক ভালোমতো পরিষ্কার করার জন্য ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস ওঠানোর জন্য একটি ফেস ক্লিনিং করানো যেতে পারে। অবশ্য ছেলেরা ফেশিয়ালের কাজটি হলুদের আগেই সেরে নিতে পারেন।
হেয়ার ট্রিটমেন্ট-
এ ক্ষেত্রেও মেয়েরা অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন। ক্লান্তি দূর করার জন্য দুই দিন আগে একটি হট অয়েল ম্যাসাজ নেওয়া যেতে পারে। ছেলেরা হেয়ার ট্রিটমেন্ট বিয়ের আগে করিয়ে ফেললে সমস্যা নেই।
স্পা-
বিয়ের আগের ক্লান্তি কাটাতে ফুল বডি স্পা করাতে পারেন। বর-কনে দুজনের জন্যই এটি প্রয়োজনীয়।
হাত ও পায়ের যত্ন-
মেহেদি পরতে হবে বিয়ের ঠিক আগের রাতে। এর আগেই পেডিকিওর ম্যানিকিওর ও ওয়্যাক্সিং করে ফেলা ভালো।
পরিচ্ছন্নতা ও মেকআপ তোলা-
কাজী কামরুল ইসলাম শরীর দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে এক মাস আগে থেকে রোজ এক বালতি পানিতে এক চামচ ফিটকিরি মিশিয়ে গোসল করার পরামর্শ দেন। দাঁতে স্কেলিংয়ের প্রয়োজন হলে তা বিয়ের ১৫ বা ৩০ দিন আগেই করিয়ে ফেলা উচিত।
অনুষ্ঠানের দিন-
ঘুম থেকে উঠে ভালো করে গোসল করতে হবে অনুষ্ঠানের দিনটিতে। চুল শ্যাম্পু করে এরপর কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর ভালোমতো শুকিয়ে নিন। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ত্বক শুষ্ক হলে কাঁচা হলুদ বা কোনো উপটান এদিন ব্যবহার করা উচিত হবে না, এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যাবে।
চুলে জেল লাগালে তা পরদিন ভালোমতো ধুয়ে ফেলতে হবে। আর যতই ক্লান্তি থাকুক, কনেরা যেন ঠিকমতো মেকআপ তুলতে ভুলে না যান। জলপাই তেল ও ক্লেনজার দিয়ে সম্পূর্ণ মেকআপ ভালোমতো তুলে ফেলতে হবে।
দিন শেষে চুলের ক্লিপ ও কাটা আস্তে আস্তে খুলে ফেলতে হবে, সেদিন চুলে আর কিছু করার দরকার নেই। পরদিন সকালে অনেক বেশি পরিমাণ তেল পুরো চুলে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভালোমতো শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগানোর পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে করে চুলের জট ছাড়াতে হবে। তাড়াহুড়া করে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করলে চুল ছিঁড়ে যাবে।
খাওয়া ও ঘুম-
বিয়ের আগে উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় পাত্রপাত্রীর ঘুম গায়েব হবে, তবে এটি মোটেও কোনো কাজের কথা নয়। বিয়ের আগে নির্ভার থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা করে ঘুম আর আহারে অনিয়ম করা যাবে না। বিয়ের দিন বেশির ভাগ মানুষই ঠিকমতো খেতে পারেন না, অনুষ্ঠানের সময় তখন দুর্বল বোধ করতে থাকেন। রাহিমা সুলতানা বিয়ের দিন কনে ও বরকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার পানের পরামর্শ দেন। সঙ্গে অবশ্যই কিছু খেতে হবে। ভাত জাতীয় কিছু খেতে না পারলে মিষ্টি, চকলেট, টাটকা ফলের রস, ডাবের পানি একটু পরপর পান করতে হবে। বিয়ের আগে ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
ছবিঃ সংগৃহীত