বিয়ের পর নতুন বউয়ের সাজসজ্জা
নতুন বউ শব্দটিই যেন একটু আদুরে। নতুন পরিজনের ভিড়ে এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়ানো এক স্নিগ্ধ সুন্দর মানবী। এই সৌন্দর্য তো আর এমনি এমনি আসবে না, প্রয়োজন সাজসজ্জায় সচেতনতা। এ সময় মুখজুড়েই যেন স্নিগ্ধতার ছায়া থাকে। তা ছাড়া বিয়ের পর এ বাড়ি ও বাড়ি দাওয়াতে যাওয়ার বিষয়টি তো আছেই। তাই এই সময়টিতে উপযুক্ত শাড়ি, গয়নায় নিজেকে সাজিয়ে রাখার পর্বটাও বেশ কয়েক দিন চলে। তবে ঘরোয়া পরিবেশের দাওয়াতে খুব জমকালোভাবে না সাজাই ভালো।
গয়না কেমন হবে-
বিয়েতে ভারী গয়না, ভারী সাজ ছাড়া নতুন বউ ভাবাই যায় না। কিন্তু বিয়ের পর নতুন বউয়ের ভারী গয়নায় সেজে থাকাটা একটু অস্বস্তির, বেমানানও বটে। এ সময় নতুন বউয়ের তিনটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখা জরুরি- ব্যক্তিত্ব, দেশীয় ঐতিহ্য ও স্বস্তি। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির ঘরোয়া পরিবেশে দেশীয় পোশাকে হালকা গয়নাতেই ভালো লাগে। আমাদের দেশে শাড়ি আর থ্রিপিসে নতুন বউদের ভালোই মানিয়ে যায়। কানে-গলায় পরতে পারেন ইমিটেশনের গয়না। চিকন চোকার, দু-তিন লেয়ারের মুক্তার হার, পেনডেন্ট ভালো মানিয়ে যায়। হাতে পরতে পারেন কয়েক গাছি চুড়ি, নান্দনিক ডিজাইনের একখানা বালা। নাকে থাকতে পারে নথ।
রাতের কোনো অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে হাতে থাকতে পারে নানা নকশার বালা, বাউটি, মুগ বালা অথবা হাতভর্তি চুড়ি। নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী গলায় সরু হার, কানের ঝুমকা দুল পরতে পারেন। সোনার গয়নার পাশাপাশি গোল্ডপ্লেটেড এসব গয়না পরতে পারেন। পাথর, পুঁতি, কুন্দন, মুক্তা দিয়ে বানানো গয়নাগুলো ট্রেন্ডি আবার মানিয়েও যায় সবার সঙ্গে। মেটালর অক্সিডাইজড বা অ্যান্টিক পলিশের গয়নাও দারুণ মানিয়ে যায় নতুন বউদের।
সাজ কেমন হবে-
ঘরের ভিতরে কড়া সাজ নয়, বরং কাজল, লিপস্টিক, হালকা পাউডারেই শেষ হতে পারে নতুন বউয়ের সাজ। যদি আত্মীয়-স্বজনের বউ দেখতে আসার থাকে, তাহলে একটু বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে সাজটা। সকালে মুখটা পরিষ্কার করে বিবি ক্রিম লাগিয়ে তাতে হালকা করে বুলিয়ে নিন ফেস পাউডার। চোখের পাতায় হালকা শ্যাডো লাগিয়ে নিন। কাজল বা আইলাইনারে চোখটা সাজিয়ে নিন মনমতো, সঙ্গে দিতে পারেন একটু শিমারের ছোঁয়া। চোখের পাপড়িতে মাশকারা। কেউ কেউ পছন্দের লেন্স ব্যবহার করেন। সাজের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন রঙের লিপস্টিক দিন ঠোঁটে। চুলটা রাখতে পারেন খোলা, কিংবা করতে পারেন হাতখোঁপা। অথবা সামনের চুলটা আঁচড়িয়ে ক্লিপে আটকে নিয়ে পিঠের ওপর ছড়িয়ে রাখা যেতে পারে। একপাশে এলোমেলো বেণিও বেশ মানিয়ে যাবে। একটু ট্রেন্ডি ভাব আনতে চাইলে চুলটা একটু কোঁকড়া করে মাঝ বরাবর সিঁথি করতে পারেন। বা খোঁপাতেও বেঁধে নিতে পারেন। ব্যস, নতুন বউয়ের মিষ্টি একটা সাজ পেতে এটুকুই যথেষ্ট।
ত্বকের যত্ন নিন-
খুব ধুমধাম করে তো বিয়ের পর্ব শেষ হলো। বিয়ের আগে নানা প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে তো স্কিনের কেয়ার টাও ঠিক মতোই নিয়েছিলেন। ভাবছেন বিয়ের ঝামেলা শেষ এখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। সত্যি বলতে কী, বিয়ের পরের সময়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় একগাদা মেকআপ, হেয়ার স্টাইলের কারণে ত্বক এবং চুল দুটোরই প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাই বিয়ের সুন্দরী বউ মেকআপ তোলার পরেও যেন একই রকম সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারেন তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
রাতে শোয়ার আগে মেকআপ তুলে চালের গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে স্ক্র্যাব করে নিন। এবার মুলতানি মাটির সঙ্গে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমোতে চলে যান। এই প্রক্রিয়াটি খুব অল্পতেই আপনার ত্বকের সুস্থতা ধরে রাখবে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সপ্তাহে ১ দিন এই প্যাকটি কন্টিনিউ করতে থাকুন।
বিয়ের পর চুলের যত্নেও হতে হবে মনোযোগী। রাতে বাসায় ফিরে কার্ল করা চুলের জট ছাড়াতে গিয়ে চুলের সর্বনাশ করে বসবেন না। ক্লিপ, কাঁটা খুলে ভালো করে চুলে নারিকেল তেল লাগিয়ে নিন। এরপর কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সিঁথি কেটে তেল স্ক্যাল্পে লাগাতে হবে। এভাবে সারা রাত রেখে দিন। পরদিন সকালে উঠে চুলে হালকা করে চিরুনি করে শ্যাম্পু করে নিন। কন্ডিশনার লাগাতে একদম ভোলা যাবে না। বিয়ের পর সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন স্ক্র্যাবিং, ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেইস প্যাক এবং ময়েশ্চারাইজিং অবশ্যই অ্যাপ্লাই করবেন। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে সাজের জন্য খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত