আপনিও কেন সাজবেন না ?
মুখে ব্রণ হয়েছে, কিংবা চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়েছে। কালো দাগও পড়েছে কারও কারও। কিন্তু তাই বলে কি মেকআপ করা চলবে না? সুন্দর ত্বকে মেকআপ বসে আরও ভালোভাবে, কিন্তু তেমন সুন্দর ত্বকের অধিকারী যদি আপনি না হন! তাহলে কি আপনার সাজা মানা?
ব্যাপারটা তেমন না, ত্বক ভালো রাখার জন্য নিয়মিত যত্ন তো চাই। পাশাপাশি মেকআপ করার জন্যও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। তবে অনেকেই চিন্তায় পড়েন মেকআপের ফলে ত্বকের সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যায় কি না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ শিকদার। তিনি বললেন, ব্যবহৃত প্রসাধনীর কারণে কখনো কখনো ব্রণ হতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকে অতিরিক্ত মেকআপ করলে ব্রণের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য চাই সতর্কতা।
ত্বকের প্রস্তুতি-
রূপবিশেষজ্ঞ জাহিদ খান বলেন, সাজগোজের আগে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। সময় থাকলে স্ক্রাবার দিয়েও মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এতে ত্বকের হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাক হেডস ও মরা কোষ উঠে যাবে। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়া মেকআপ শুরুর আগে তৈলাক্ত ত্বকে ওয়েল ফ্রি প্রাইমার ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে আর দীর্ঘ সময় ধরে মেকআপ ঠিকঠাক রাখবে। আর শুষ্ক ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে পারেন তেলযুক্ত প্রাইমার।
সংবেদনশীল ত্বকে সাজ-
আলতো হাতে মেকআপ দিন। বেশি দ্রুত বা জোর করে ঘষে করে মেকআপ দিতে গেলে ত্বকের আরও বেশি ক্ষতি হবে। ত্বকে যত কম হাত দেওয়া যায় তত ভালো। নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন আপনার মেকআপ ব্রাশ ও স্পঞ্জ। কিছুদিন পরপর এগুলো পরিবর্তন করা ভালো। শহীদুল্লাহ শিকদার বলেন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন না থাকলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং অতিরিক্ত মেকআপ ব্রণের উপদ্রব ঘটাতে পারে। আবার অ্যালার্জিও হয়ে যেতে পারে।
ব্রণ থাকলে মুখে কীভাবে মেকআপ বসানো হয়, তা জানতে চেয়েছিলাম ডিভাইন বিউটি লাউঞ্জের মেকআপ শিল্পী বাপন রহমানের কাছে। তিনি জানালেন, শীতে পাউডার ধরনের মেকআপ কম ব্যবহার করা উচিত। তার বদলে বেছে নিতে পারেন ওয়াটার বেসড তরল বা প্যানস্টিক মেকআপ। যেমন লিকুইড বা স্টিকি ফাউন্ডেশন, ব্লাশ, লিকুইড শিমার। তাতে ত্বক বেশি শুষ্ক হবে না। ওয়াক্স আছে এমন পণ্য, অথবা প্যানকেক, পাউডার ধরনের ফাউন্ডেশনগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, এগুলো ব্রণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
ত্বকে ব্রণের দাগ থাকলে কীভাবে মেকআপ করতে হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, মেকআপের প্রথম ভিত নেওয়ার আগে ত্বকের রঙের থেকে এক বা দুই শেড গাঢ় ক্রিম কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। তাতে মুখের ওপর এবং চোখের নিচের দাগগুলো বোঝা যাবে না। মেছতার কালো দাগের ওপর সব সময় বাদামি রঙের ফাউন্ডেশন, কনসিলার কিংবা কমপ্যাক্ট ব্যবহার করুন। এতে কালো দাগ মুখের সঙ্গে মিশে যাবে।
মেকআপ তুলতে-
মেকআপের পর সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করা না হলে ব্রণের হতে পারে কিংবা আরও বাড়তে পারে। ত্বক পরিষ্কার করতেও এমন সামগ্রী ব্যবহার করা উচিত, যা ত্বকের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায়। মেকআপ তোলার জন্য অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাদের অ্যালার্জি হয়, তারা লোশন কিংবা ক্লেনজার ব্যবহার করবেন। বেবি লোশন আর হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে ভালো হয়—বললেন জাহিদ খান।
ত্বক রাখুন পরিষ্কার-
শীতের সময় প্রাকৃতিক কারণেই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির, তাঁদের ত্বকের তৈলাক্ত ভাবও এ সময় খানিকটা কমে আসে। তারপরও ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, না হলে ব্রণের প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
জাহিদ খান বলেন, মেছতার সমস্যা দূর করার জন্য সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। সপ্তাহে কয়েকদিন কমলার খোসা এবং মসুরের ডাল একসঙ্গে বেটে মেছতার ওপর ব্যবহার করলে সুফল পাবেন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নকশা
ছবিঃ সংগৃহীত