ত্বকের যত্ন করুন নিয়ম মেনে

ত্বকের যত্ন করুন নিয়ম মেনে

প্রকৃতিরও কিন্তু খামখেয়ালিপনা আছে আর প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার দাপটে বছরের বেশিরভাগ সময়ই কিন্তু এখন গরম তাপমাত্রার পারদ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী, আর এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের নাভিশ্বাস ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক কাঠফাটা রোদে কিছুক্ষণ বাইরে থাকলেই মন বারবার তাগিদ দিতে থাকে ঘরে ফেরার জন্য সূর্যের যা তেজ তাতে সানবার্ন, সানট্যান এগুলো এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার তাছাড়া বাতাসে আর্দ্রতা এই সময় বেশি থাকে বলে ঘাম তেল সিক্রেশনও বেশি হয় ফলে র‌্যাশ, ব্রণ ঘামের দুর্গন্ধ এগুলো হয় উপড়ি পাওনা এই সমস্যাগুলোর হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতে গরম পড়ার একেবারে শুরু থেকেই যত্ন নিতে হবে নিয়ম মেনে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং ক্রিম ব্যবহার করলেই সানবার্ন, সানট্যান, হিট ‌র‌্যাশ ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে

ক্লিনজিং -

ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন গরমের দিনে দুই থেকে তিনবার মুখ পরিষ্কার করা অতি প্রয়োজন। কারণ গরমের সময় ত্বকে ঘাম তৈল নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ওপর ধুলো-ময়লা, নোংরা, গাড়ির ধোঁয়া সব জমতে থাকে যা লোমকূপে জমে ত্বকের ক্ষতি করে। ফলে ত্বক হয় অনুজ্জ্বল-নির্জীব এবং বাড়তে থাকে র‌্যাশ ব্রণের সমস্যা আর এই জন্যইক্লিনজিং ইস মাস্ট তবে সাবান দিয়ে মুখ পরিষ্কার না করাই ভালো, ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন রকম ক্লিনজার পাওয়া যায়। স্বাভাবিক থেকে শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে ক্লিনজিং ক্রিম। মিশ্র প্রকৃতির জন্য ক্লিনজিং মিল্ক বা লোশন আদর্শ। মেডিকেটেড ক্লিনজার ব্যবহার করবেন যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্য আছে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রয়োজন ডিপ পোর ক্লিনজার। কারণ ধরনের ক্লিনজার লোমকূপের একেবারে ভেতরে জমে থাকা তেল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সারাদিনে কাজের যে চাপ তার রেশ ওঠে বাড়ি ফিরে। কিন্তু তাই বলে মুখ পরিষ্কার না করে ঘুমানো একেবারেই অনুচিত। সারা দিনে জমে থাকা ময়লা ত্বক অনুযায়ী ক্লিনজার ব্যবহার করে পরিষ্কার করলে সমস্যাগুলো থেকে যেমন অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যাবে তেমনি ঘুমও ভালো হবে। এর পাশাপাশি গরমের সময় সারা দিনে কয়েকবার ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটা দিলে মুখও পরিষ্কার হবে আপনার ক্লান্তি বোধও দূর হবে

টোনিং -

ত্বক নিয়ে যারা সচেতন তাদের বলি, গরমের সময় ফ্রেস থাকার জন্য টোনার ব্যবহার করতে পারলে ভালো। রোজ বা ল্যাভেন্ডারের মতো ফুলের নির্যাশ দিয়ে তৈরি টোনার গরমের সময় আদর্শ। যে কোনো কসমেটিক্সের দোকানেই টোনার পেয়ে যাবেন। তাছাড়া গোলাপজল ফ্রিজে রেখে তুলার বলে নিয়ে মুখে, গলায় ব্যবহার করতে পারেন। অ্যান্টিনজেন্টও টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি টোনিংয়ের কাজও করবে আবার এটির ইফেক্ট গরমের র‌্যাশ থেকেও রেহাই দিবে

ময়েশ্চারাইজিং-

শীতকালেই শুধু ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন এই ধারণাটি কিন্তু ভুল। গরমেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি। রাতে মুখ পরিষ্কার করার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে পরে ঘুমানোর আগে তুলার বল দিয়ে বাড়তি ক্রিম মুছে নিলে ভালো। তবে যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের গরমের সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করাই উচিত

সানস্ক্রিন -

ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চরাইজিং ত্বকের যত্নে এগুলো সবই বাড়ি বসে করতে পারেন। কিন্তু যখন দৈনন্দিন কাজে বাইরে যাচ্ছেন তখন কিন্তু সূর্য মামা তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যে বিভিন্ন রশ্মি বিকিরণ করে যাচ্ছে তার মোকাবিলা করতে হবে। সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে সানট্যান, সানবার্ন, ডার্কপ্যাচ, র‌্যাশসহ হাজারও সমস্যা দেখা দেয়। এমন কি বলিরেখা, পিগমেনটেশনের সমস্যাগুলোও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির জন্য আরও বেড়ে যায়। তাই দিনের বেলায় বাইরে বের হলেই সানস্ক্রিন ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। এটি সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। ক্ষেত্রেও ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন লোশন অথবা ক্রিম পাওয়া যায়। শুধু ত্বকের ধরন অনুযায়ী ভালো কসমেটিক্সের দোকান থেকে কিনতে হবে

রোদে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। শুধু মুখ নয়, শরীরের যে যে অংশ অনাবৃত থাকে সেখানেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তবে একটা কথা আমরা অনেকেই জানি না, আর তা হল, কোনো সানস্ক্রিনই কিন্তু সারাদিনের জন্য ত্বকের সুরক্ষা দিতে পারে না। তাই দীর্ঘ সময় যাদের বাইরে থাকতে হয় তারা ব্যাগেই রেখে দিতে পারেন ক্লিনজার সানস্ক্রিন। তিন-চার ঘণ্টা অন্তর মুখ পরিষ্কার করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারলে খুবই ভালো

ত্বককে খুব সতেজ রাখতে হলে শুধু বাইরে থেকে যত্ন করলেই হয় না। মনে রাখতে হবে গরমে সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র হচ্ছে ডিহাইড্রেশন। গরমে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ডিহাইড্রেশনের সমস্যা। আর এই ডিহাইড্রেশন থেকেই জন্ম নেয় বাকি অন্য সব সমস্যা। প্রচুর পরিমাণ পানি পানীয় ( ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ) পান করতে হবে এবং সেই সঙ্গে এক বা একাধিক বার প্রতিদিন প্রয়োজন বুঝে নিয়মিত গোসল করতে হবে। তবেই শরীরকে ডিহাইড্রেট করা যাবে এবং এই প্রচণ্ড গরমেও পাওয়া যাবে কোমল, মসৃণ ত্বক

 

সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর

ছবিঃ সংগৃহীত