ঈদ ফ্যাশন-শাড়ির নকশায় নতুনত্ব
সৌন্দর্য, উপলক্ষ, আবহাওয়া, সবকিছুর মেলবন্ধন হওয়া চাই ঈদের শাড়ি। আর তাই আরাম ও উৎসব, দুটোর মিশেলে এ বছর ঈদের শাড়িতে ডিজাইনাররা সুতির পাশাপাশি প্রাধান্য দিয়েছেন সিল্ক শাড়িও। ডিজাইনার শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘আরামদায়ক হওয়ায় গরমে ঈদ হলেও সুতি, কাতান, রাজশাহী সিল্ক, হাফসিল্ক, জামদানি শাড়ির কদর এবারও থাকবে। প্রিন্টের সুতি কাপড়েও এ বছর বেশ কিছু নকশা করা হয়েছে। এতে সাধারণ প্রিন্ট শাড়িতেই ফুটে উঠেছে উৎসবের ছোঁয়া।’
এবার ঈদ ফ্যাশনে নজর কাড়ছে পেটানো কাজের ঐতিহ্যবাহী এবং আরামদায়ক সব শাড়ি। রঙের বেলায় ডিজাইনাররা অনুপ্রেরণা নিয়েছেন বর্ষা থেকে। তাই শাড়িতে এবার নীলের প্রাধান্য থাকছে বেশি। এ ছাড়া বেগুনি, ম্যাজেন্টা, সবুজ, কালো ও কন্ট্রাস্ট রঙের প্রতিও থাকছে নজর। সিল্ক, জামদানি, কাতান, মসলিনসহ বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিশনাল শাড়ির প্রতি এখন ক্রেতাদের আগ্রহের কথা জানালেন টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার মনিরা এমদাদ। বলেছিলেন, ‘সিল্ক টাঙ্গাইল, মিরপুরের কাতান, পিওর সিল্ক, হাফসিল্ক, পিওর কটন শাড়ির চাহিদা এবার বেশি।
কারণ এগুলো গরমেও আরামদায়ক। টাঙ্গাইলের শাড়িতে প্রিন্ট সব সময়ই জনপ্রিয় ছিল। এবারও আছে। ঈদে ঐতিহ্যবাহী শাড়ির নকশায় ব্যবহার হয়েছে শিবুরি, জারদৌসি, এমব্রয়ডারি, সুতা ও কারচুপির কাজ। তবে পাথর, চুমকির জাঁকজমক শাড়ির চলটা এবার অনেকটাই কম।’
উৎসবে ট্রেডিশনাল শাড়ির প্রতিই এখন ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি বলে মনে করেন রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার সৌমিক দাস। তিনি জানান, ‘শাড়ির জমিনের নকশার চেয়ে পাড় এবং আঁচল এবার বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বৈচিত্র্য থাকছে কুঁচিতেও। কুঁচিতে ছাপানকশা তো থাকছেই, এ ছাড়া দুই রঙা শাড়ির ওপরের পাড়ের থেকে কুঁচির সামনের দিকের অর্ধেক পর্যন্ত বুননে থাকছে লতাপাতার নকশা।’
শাড়িতে একসময় ডিজিটাল প্রিন্টের কথা ভাবাই যেত না। এবার শাড়ির জমিন, আঁচল, পাড়ে ডিজিটাল প্রিন্টের নকশাও ব্যবহার হয়েছে। দেশীয় ঐতিহ্যের একটা আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে ডিজাইনারদের। শাড়ির মতো ব্লাউজের নকশাটাকেও এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন ডিজাইনার লিপি খন্দকার। বলেন, ‘এখন সাদামাটা শাড়িটাকেই পরা হচ্ছে জমকালো ব্লাউজ দিয়ে। ব্লাউজ এখন নয়া রূপ পেয়েছে কোটি, জ্যাকেট ব্লাউজের মতো ভিন্নধর্মী ব্লাউজে। লম্বায় কখনো তা কোমর ছাড়িয়েছে, কখনো বা ব্লাউজের দৈর্ঘ্যই মানিয়ে যাচ্ছে।’
বর্ষার শুরুতে ঈদ হওয়ায় বিশ্বরঙ বর্ষার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে সাজিয়েছে ঈদে শাড়িসহ সব আয়োজন। তাঁতের এক্সক্লুসিভ শাড়ির পাশাপাশি হাফসিল্ক, কাতান, মসলিন, রেশমি কটন শাড়ি নিয়ে কাজ করেছে বিশ্বরঙ। রঙ বাংলাদেশ কাজের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে সুতা, ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট ও এমব্র্রয়ডারি। কাজের এ মাধ্যমগুলো ব্যবহার হয়েছে ফুল, জিওমেট্রিক ও ইসলামিক মোটিফে। সাদাকালো পোশাকের থিম হিসেবে ব্যবহার করেছে এথনিক মোটিফ। এথনিক বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব বুননরীতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শাড়ির নকশায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এবার ক্রেতাদের নজর ট্রেডিশনাল কাতান এবং একটু ভিন্নধর্মী শাড়ির দিকে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে সিল্ক হাউসের সেলস এক্সিকিউটিভ বশির আহমেদ জানালেন এ বছর সিল্ক কাতান, চেন্নাই কাতান, আর্নি কাতান ভালো চলছে। চেন্নাই কাতান শাড়ির জমিন ও কুঁচিতে দুই রঙ ব্যবহার হয়েছে। শিফন শাড়ির পাড়ে সাটিন কাপড় জুড়ে করা হয়েছে কিছু নকশা। সঙ্গে সিল্কের ব্লাউজ পিস। ঐতিহ্যবাহী শাড়ির সমারহ রয়েছে মিরপুরের বেনারসিপল্লীতে।
ব্যস্ত ক্রেতাদের জন্য প্রস্তুত এখন অনলাইন শাড়ির বাজারও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক শপ সাভেরী’স ক্লথিং লাইনে পাওয়া যাবে কলকাতা, ওডিশা, শান্তিনিকেতন ও মুর্শিদাবাদের জয়পুরী, কলামকারী, মসলিন ও গাদোয়াল শাড়ি। ঈদ উপলক্ষে হাফসিল্ক জামদানি, সুতি জামদানি, চেরিকোটা জামদানিসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ির সংগ্রহ রয়েছে বন্ধনশপ ডটকমে। অনলাইন শপ ফারজানা’স বুটিকের স্বত্বাধিকারী ফারজানা চৌধুরী জানান, আমরা সিল্কের শাড়িতে ভেজিটেবল ডাই করেছি। এ ছাড়া নিজস্ব তাঁতিকে দিয়ে বোনানো জামদানি এবং টিস্যু কাপড়ে ডাইসহ একটু ভিন্ন ধরনের শাড়িও করেছি। মিরপুরি কাতান, সানন্দা কাতানসহ বিভিন্ন ধরনের কাতান পাওয়া যাবে ২,০০০-১০,০০০ টাকায়, রাজশাহী সিল্ক, হাফসিল্ক, অ্যান্ডি সিল্কসহ বিভিন্ন ধরনের সিল্ক ২,০০০-২০,০০০ টাকা। জর্জেট ১,৫০০-২০,০০০ টাকা। তাঁত, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন সুতি শাড়ি ৮০০-৮,০০০ টাকা। জামদানি ২,৫০০-২৫,০০০ টাকা। মসলিন ও রেশমের শাড়ি ৩,৫০০-৩০,০০০ টাকা। সিলভার, গোল্ড প্লেটেড অর্নামেন্টের ডেকোরেশনের এক্সক্লুসিভ শাড়ি ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ।
ঈদ উপলক্ষে এক্সক্লুসিভ শাড়ি রয়েছে গুলশানে নাবিলা, জারা, ভাসাভি ফ্যাশন হাউসে। এ ছাড়া অঞ্জন’স, বিবিয়ানা, সাদাকালো, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এবং তন্তুজ, ফারজানা’স বুটিকস, বন্ধনশপ ডটকমসহ বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকেও কিনতে পারেন ঈদের শাড়ি। পাশাপাশি টুইন টাওয়ার, গাউসিয়া, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট তো রয়েছেই।
সূত্র ও ছবিঃ দৈনিক আমাদের সময়