ঈদে বর্ণিল পোশাক
গ্রীষ্ম হোক কিংবা বর্ষা। ঋতুর কাছে ঈদের বাঁধভাঙা আনন্দ হার মানবে, তা কি হয়! ভ্যাপসা গরম কিংবা বৃষ্টিবাদলা বলে ঈদের পোশাকে সৌন্দর্য ম্লান নয়, বরং ঋতুর সৌন্দর্যে এবার ঈদের পোশাক হয়ে উঠেছে আরও বেশি বর্ণিল। ঈদের পোশাকের ডিজাইনে ফ্যাশন ডিজাইনাররা এবার বেছে নিয়েছেন একই সঙ্গে জমকালো ও আরামদায়ক ফেব্রিক। বেশিরভাগ পোশাকই তৈরি হয়েছে সুতি, ভয়েল, তাঁত, সুতি, জর্জেট, লিলেন, সিল্ক, হাফসিল্ক ও মসলিন কাপড়ে। আর তাতে জমকালো ভাব ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার হয়েছে জারদৌসি, ব্লক, কারচুপি, অ্যাপ্লিক, এমব্র্রয়ডারির কাজ।
ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার জানালেন, ‘উইভিং করা সুতি, ভয়েল, লিলেন, সিল্ক কাপড়ে এমব্র্রয়ডারি, টাইডাইসহ হাতের কাজের নকশা করা হয়েছে পোশাকে। গলার অংশে উজ্জ্বল রঙের সুতির কাজ এবার বেশি দেখা যাবে। কোনো কামিজের সম্পূর্ণ বডিতে আবার কোনোটিতে নিচের অংশে সুতার মোটা ও ভরাট ডিজাইন করা হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পোশাকের পেছনের অংশের কাজেও।’
ফ্যাশনের পরিবর্তন ও আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে পোশাকের প্যাটার্নে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে পোশাকটি আরামদায়ক হয়। কামিজের কাটিং, কলার, লে-আউট, ছাপা, ব্লক, বাটিক ব্যবহার প্রায় সবকিছুতে খুঁজে পাওয়া যাবে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। ফ্যাশন ট্রেন্ডে তরুণীরা এখন ট্র্যাড্রিশনাল পোশাকের আধুনিক প্যাটার্নটা বেশি পছন্দ করছেন। ‘সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি সব ধরনের পোশাকের ক্ষেত্রে এবারও ফ্লাওয়ার মোটিফের চাহিদা বেশি থাকবে। শাড়ির নকশায় শাড়ির চেয়ে পাড় বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বডিতে হালকা, পাড়ে ভারী নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কুচির অংশে একরঙা, জমিন, আঁচল ও পাড়ে ভিন্ন রঙের ব্যবহারেও শাড়ি হয়ে উঠেছে বর্ণিল। ছেলেদের পাঞ্জাবিতে শেরোয়ানি কাট গুরুত্ব পাবে।
পাঞ্জাবির প্লেট, সাইড, পেছনে অংশ এবার নকশা বেশি দেখা যাবে বলে জানান রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার ও ডিজাইনার সৌমিক দাস।
কে-ক্র্যাফটের নির্বাহী প্রধান এবং ফ্যাশন ডিজাইনার শাহনাজ খান জানালেন, ‘ঈদের পোশাক জমকালো ও আরামদায়ক করতে পোশাকের ভ্যালু অ্যাড নয়, প্যাটার্নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্যাটার্ন জমকালো করতে এ বছর কোটি বেজড সালোয়ার-কামিজ বেশ চলবে। বিবিয়ানা, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্ব রঙ, মায়াসির, দেশাল, কে-ক্রাফটসহ দেশীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়, শার্ট ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০, সালোয়ার-কামিজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার, কুর্তি ও টপস ৮০০ থেকে ৩ হাজার, সুতি শাড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন ২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।ফ্যাশন হাউস ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেট কিংবা শপিংমল থেকেও পছন্দের পোশাকটি কিনে নিতে পারেন।
এ ছাড়া লেয়ার কামিজ এবার ঈদ ফ্যাশনের ট্রেন্ড হিসেবেও থাকবে। ঝুল পছন্দের তালিকায় রয়েছে লং ও সেমি লং। ফ্রক ও এক ছাঁট, দুধরনের পোশাকই চলবে। গাউনের চাহিদা কিছুটা কমে এসেছে।’ উৎসবের বর্ণিলতা ধরে রাখতে এবং একই সঙ্গে রঙটাকে আরামদায়ক করে তুলতে গাঢ় রঙের হালকা শেড ব্যবহার হয়েছে। নীলের হালকা শেড আকাশি, সবুজের হালকা শেড কলাপাতা সবুজ, বেগুনি, কমলা, ম্যাজেন্টার হালকা শেড বেশি দেখা যাবে। পেন্সিল কাট প্যান্ট, টপ প্যান্ট, স্কার্ট কোট পালাজ্জোসহ বিভিন্ন রকম লেয়ার টপও ঈদ ফ্যাশনে সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
প্লাস পয়েন্টের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিপুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের শার্টে থাকছে পকেটের ব্যবহার। এক ও দুই পকেটের এসব শার্টের কাঁধ, কলার বা হাতার ভাঁজে ছোট ছোট পরিবর্তন এসেছে। কাঁধে সোলজার স্প্রিপ যোগ হয়েছে। শার্টের উঁচু কলার, ব্যান্ড কলার ইত্যাদি ট্রেন্ড দখল করে থাকবে।’
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের মধ্যে রঙ বাংলাদেশের এ বছর পোশাকের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে ইসলামিক, জিওমেট্রিক ও ফ্লোরাল মোটিফ। সুতি, অ্যান্ডি, পাতলা সিল্কসহ বিভিন্ন আরামদায়ক কাপড়ে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। কে-ক্র্যাফটের পোশাকের মোটিফে এবার গুরুত্ব পেয়েছে ফ্লাওয়ার। সেখানে বর্ষার রঙিন ফুলেরা জায়গা দখল করে নিয়েছে। হালকা কাজের পোশাকের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ভারী জামকালো পোশাকও। নীল, সবুজ, বেগুনিসহ বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের হালকা শেড ছাড়া সাদার মধ্যে সাদা কাজের পোশাক রঙ ছড়াবে ঈদে।
দিন দিন অনলাইন শপের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। রোজার মাসে তীব্র যানজট বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই ঘরে বসে অনলাইন শপ থেকে ঈদের কেনাকাটা করছেন। নগরদোলা, সাদাকালো, প্রবর্তনা, রঙ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউসের পোশাক এখন চাইলে অর্ডার করতে পারেন ঘরে বসেই।
সূত্র ও ছবিঃ দৈনিক আমাদের সময়