মুক্তা ও পাথরের গয়না দিয়ে ফ্যাশন
সময় বদলেছে, বদলেছে ফ্যাশনের ধরনও। আজকাল ফ্যাশনের সব ধারায়ই গয়না হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মুক্তা-পাথরের গয়না। আগেকার মিসরীয় ও চীনা রাজবংশে এসব ফ্যাশনেবল গয়না ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। এখনো তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এখন পশ্চিমা ও পূর্বের মিশেলে তৈরি গয়নাগুলোর দাপট রয়েছে প্রায় সমানতালেই। কিছুকাল আগেও আঁটসাঁট গয়নায় আভিজাত্য প্রকাশ পেত। বর্তমানে এসব গয়না একদিকে যেমন পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যাচ্ছে তেমনি বাঙালিয়ানাতেও আনছে নতুনত্ব।
মুক্তা এখন সহজলভ্যই বলা চলে। যদিও পাথরের গয়না কিছুটা চড়া মূল্যের। তাই শুধু আভিজাত্যে আর সৌন্দর্যের জন্যই নয়, সাধ্যের মধ্যেও বেছে নিতে হবে মুক্তা-পাথরের গয়না। নব্বইয়ের দশকে মুক্তার সঙ্গে সোনার ব্যবহার জনপ্রিয় ছিল। এখন মুক্তার গয়নায় রুবি, পান্না, জারকানসহ বিভিন্ন রত্নপাথর বেশ চোখে পড়ে। বয়স্করা মুক্তার গয়না পছন্দ করেন শুভ্রতা আর সিম্পলিসিটির জন্য। তরুণদের কাছে এটি ফ্যাশনেবল।
সদা, সবুজ, সোনালি ও গোলাপি রঙের মুক্তা সব রঙের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। শিফন ও ক্রেপ শাড়ির সঙ্গে মুক্তার গয়না ভালো দেখায়। চিকন পাড়ের রাজশাহী সিল্ক, এক রঙের শাড়ি ভালো লাগে ছোট গয়নার সঙ্গে। জরিপাড়, জামদানি শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন সোনার চেইনের সঙ্গে মুক্তার লকেট।
মুক্তার গয়নায় রয়েছে অনেক রং, যেমন— সবুজ, কালো, সাদা, গোলাপি ও ফিরোজা। নগরীর গুলশানের পিংক সিটিতে রয়েছে মুক্তার গয়নার বেশ কিছু দোকান। মুক্তার গলার ও কানের সেট, আংটি, নেকলেস, টিকলি, চুড়ি ইত্যাদি পাওয়া যায় সেখানে। গয়নার বাজারে এখন মুক্তা পাথরের গয়নার আভিজাত্যের শীর্ষে। মুক্তার গয়নার ক্ষেত্রে তা আসলেই মুক্তার কি না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন ক্রেতারা। এ জন্য মুক্তাটি আসল কি না, তা জানতে কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন এই নকশাবিদ। ভালো মানের মুক্তা হলে তা অবশ্যই গোলাকার ও মসৃণ হবে। গোল আকৃতির মুক্তার গায়ে যদি দাগ থাকে তবে সেই মুক্তার মান ততটা ভালো নয়। দাগ নেই কিন্তু মুক্তার আকৃতি চ্যাপ্টা ধরনের মুক্তার স্থায়িত্ব বেশি দিন থাকবে না।
আবার ন্যাচারাল পাথরের গয়না খুব ঝকমকে না হলেও এখনকার ট্রেন্ডে বেশ জনপ্রিয়। বিডেস গয়নাও চলনসই। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না পরতে চাইলে পাথরের গয়না কিনতে পারেন। শাড়িতে গোল্ডেন বা তামাটে কাজ থাকলে অ্যান্টিক ধাঁচের গয়না মানাবে।
কানের দুলের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক আকার, চাঁদ শেপ, পাশা শেপ, চৌকা শেপ প্রাধান্য পাচ্ছে। আজকাল বড় নাকফুলও বেশ জনপ্রিয়। ধাতব বা রুপার তৈরি নথও পরছেন অনেকে। কখনো মুখ ঢাকা বড় নথ, তো কখনো নাকজুড়ে থাকা ফুল বা পাখির নকশার বড় নাকফুল। নাকফুল বড় পরলে তার সঙ্গে কান খালি রাখলে বা ছোট কানের দুল পরলে ভালো লাগবে। জমকালো সাজে এখন এক হাতে ব্রেসলেট, বালা বা বাউতির চল বেশি। অন্য হাতে থাকছে ঘড়ি বা আংটি। এক্ষেত্রে পাথর বসানো বালা বেছে নিতে পারেন।
মুক্তা চিনতে যেসব বিষয় জানা দরকার:
১. খাঁটি মুক্তা আগুনে পোড়ে না।
২. নকল মুক্তায় দাঁত দিয়ে চাপ দিলে দাগ বসে যায়।
৩. ব্ল্যাক মুক্তা কখনোই আসল হয় না।
৪. আসল মুক্তায় থাকে ঝিনুকের মতো ঝলমলে আভা।
৫. মুক্তা যত বড় হবে তত ভালো।
৬. মুক্তার গহনা সহজে নষ্ট হয় না।
মুক্তার গয়নার যত্ন -
১. মুক্তা ও সোনার গহনা কখনো একসঙ্গে রাখবেন না।
২. খোলামেলা জায়গায় রাখুন।
৩. গহনা যত পরবেন ততই ভালো থাকবে। শরীরের ময়েশ্চারাইজার মুক্তার জন্য ভালো।
৪. প্রতি বছর মুক্তার সুতা বদলে নিন। নাইলন বা সিল্কের সুতায় মালা গাঁথবেন।
৫. পানিতে ভেজালে এটি নষ্ট হয় না।
দাম এবং কোথায় পাবেন-
পৃথিবীতে সাদা মুক্তার চাহিদা বেশি হলেও রঙিন মুক্তার আকর্ষণও কম নয়। কৃত্রিমভাবে ইদানীং রঙিন মুক্তার চাষও হচ্ছে। ইদানীং ভারত ও বাংলাদেশে মুক্তার চাষ শুরু হয়েছে। বড় লহরের মালা ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। ভারী সেট ১২ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আংটি ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।
যমুনা ফিউচার পার্ক, ইস্টার্ন প্লাজা, নাভানা টাওয়ারসহ বিভিন্ন শপিং মলে পাওয়া যাবে বিভিন্ন নকশার গয়না। বৈচিত্র্যময় ট্রেন্ডি গয়নার খোঁজে যেতে পারেন আড়ং, কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেস, যাত্রাসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস থেকেও কিনে নিতে পারেন।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত