উৎসবের পরে ত্বকের যত্ন

উৎসবের পরে ত্বকের যত্ন

ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দেওয়া হয়ে থাকে। তাই বাড়িতে অনেক কাজ করতে হয়। অতিথি আপ্যায়ন করতে হয়, আবার অনেকে গ্রামের বাড়িতে যান কিংবা দূরদূরান্তেও ঘুরতে যান। তাতে অনেক ধকল যায়। সে কারণে ঈদের পর চাই বিশেষ যত্ন।

 

ঘরে তৈরি বিভিন্ন প্যাক ব্যবহার করে ত্বকে আবার সতেজ ভাব আনতে পারি। ত্বকের চর্চা করতে হবে এর ধরন অনুযায়ী। সাধারণত স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র হয়ে থাকে। ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন বা রূপচর্চা না করলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। একটা কথা সবার জানা দরকার, রূপচর্চার মাধ্যমে আমরা যেভাবেই ত্বকের পরিচর্যা করি না কেন, ত্বকে যেন উজ্জ্বল ও ভেজা ভাবটা থাকে। কিন্তু আমাদের ত্বক কালো থেকে সাদা করা সম্ভব নয়।

 

সতেজ থাকতে একটু সচেতনতাই যথেষ্ট

 

ত্বকের ধরন যেভাবে বুঝবেন-

ত্বক কী ধরনের, তা বোঝার জন্য রাতে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে মুছে ঘুমাতে হবে। মুখে কিছু লাগানো যাবে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখা যায় মুখটা খুব তেলতেলে, তবে বুঝতে হবে ত্বক তৈলাক্ত। আর যদি মুখে হালকা তৈলাক্ত ভাব থাকে, শুধু নাক ও কপাল একটু চকচকে, কিন্তু চোখের কোণ খানিকটা শুকনো এবং টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছলে খুব একটা তৈলাক্ত থাকে না, তবে সে ত্বক স্বাভাবিক।

মিশ্র ত্বকে মুখের বিভিন্ন অংশের ত্বকের প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নাক ও কপালে হয়তো তেলতেলে ভাব, আবার গালের ত্বক শুকনা—এগুলোই মিশ্র ত্বকের বৈশিষ্ট্য।

শুকনো ত্বক দেখলেই বোঝা যায়। এমন ত্বকে তেলতেলে ভাব দূরের কথা, সতেজ ভাবও থাকে না। অল্পেই বলিরেখা পড়ে যায়।

 

ঘরোয়া প্যাকেই নিতে পারেন ত্বকের যত্ন

 

যে ত্বকের যেমন যত্ন-

স্বাভাবিক ত্বক: সাধারণত সমস্যা কম থাকে। অনেকে মনে করেন স্বাভাবিক ত্বকের তেমন যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একটা বয়সের পর ত্বক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। তাই এ-জাতীয় ত্বকেরও পরিচর্যা করা উচিত। দিনে-রাতে মিলিয়ে কম করেও পাঁচবার পান‌ি দিয়ে মুখ ধুতে হবে। এতে ধুলাবালু লোমকূপে আটকে থাকতে পারবে না। সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন ফেসপ্যাক লাগাতে হবে। ফেসপ্যান লাগনোর ১৫-২০ মিনিট পরে মুখ ভালো করে স্বাভাবিক ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়বে। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য কয়েকটি ফেসপ্যাক:

১. কমলালেবুর খোসা বাটা, জলপাই তেল ও কাঁচা ডিমের কুসুম একত্রে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

২. কাঁচা ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ বেসন ও দুধের সর একত্রে পেস্টের মতো করে ১৫-২০ মিনিট রেখে প্রথমে কুসুম গরম পানি, পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

 

তৈলাক্ত ত্বক-

ভালো বলা হলেও তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা বেশি। এ ত্বক অবশ্য বেশি বয়স পর্যন্ত সজীব থাকে, বলিরেখা সহজে পড়ে না। গরমকালে এই ধরনের ত্বক থেকে বেশি পরিমাণ তেল বের হয়। তাই অন্যান্য ত্বকের তুলনায় এ ত্বকের যত্ন বেশি নিতে হয় ও পরিষ্কার রাখতে হয়। দিনে-রাতে মিলিয়ে ৮-১০ বার মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করলে ভালো। তা না হলে ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস, ফুসকুড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে মুখে দাগ পড়ে যায়।

এ-জাতীয় ত্বক সাবান বা বেসন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা উচিত। মেকআপ করার আগে কোনো অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন তুলো ভরিয়ে মুখে লাগাবেন। এর ফলে মুখ থেকে বেশি তেল বেরিয়ে মেকআপ নষ্ট হবে না। দিনে দুই-তিন লিটার পানি পান করবেন। বেশি তেল, ঘি, ভাজাপোড়া, মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। ক্রিম তৈলাক্ত ত্বকে না দেওয়াই ভালো। এতে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।

তৈলাক্ত ত্বকের কয়েকটি ফেসপ্যাক-

১. মসুর ডাল বাটা, দুধের সর একত্রে ১৫-২০ মিনিট মুখে রেখে প্রথমে হালকা গরম পানি এবং পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

২. জলপাইয়ের তেল, কাঁচা ডিমের কুসুম ও মসুর ডাল বাটা একত্রে মুখে মেখে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

ঘুম আনবে প্রশান্তি

 

শুষ্ক ত্বক-

এ ধরনের ত্বকে যত্ন নিতে হবে বেশি। তা না হলে বয়স হলেই বলিরেখা পড়তে চায় এবং ত্বক কুঁচকে যেতে থাকে। পুরোনো ত্বকে সব সময় তৈলাক্ত কিছু না কিছু লাগাতে হবে। বেশি সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। মুখ ধোয়ার পর সব সময় কোনো স্কিন টনিক বা ফ্রেশনার লাগাবেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। প্রচুর পানি পান করবেন এবং রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে সমপরিমাণ পানির সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে মুখে মাখতে পারেন। মুখের ত্বক নরম থাকবে।

শুকনো ত্বকের জন্য ফেসপ্যাক

১. কাঁচা হলুদ, দুধের সর, শসার রস ও বেসন একত্রে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

২. শসার রস, কয়েক ফোঁটা জলপাইয়ের তেল, মসুর ডাল বাটা ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

মুখমণ্ডলের একেক অংশের ধরন বুঝে হলুদ, টক দই ও শসার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন

 

মিশ্র ত্বক-

দিনে-রাতে কম করে পাঁচবার হলেও মুখ ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। মিশ্র ত্বকের শুকনা জায়গায় পরিচর্যার দরকার হয়। মুখ ধোয়ার পর তৈলাক্ত অংশে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন ও শুকনা অংশে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

মিশ্র ত্বকের বেলায়ও কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন মাঝেমধ্যে ভাপ নেওয়া, সপ্তাহে তিন-চার দিন ফেসপ্যাক লাগাতে হয়, রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ক্রিম লাগাবেন। শুকনা অংশে তৈলাক্ত ক্রিম এবং তৈলাক্ত অংশে লোশন ক্রিম লাগাবেন, বেশি করে পানি পান করবেন। খাবারে ভিটামিন সি, এ, ডি রাখবেন।

মিশ্র ত্বকের জন্য কয়েকটি ফেসপ্যাক

১. ডিমের সাদা অংশ একটু, ২ চামচ কমলার রস, ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে মুখে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

২. দুধের সর, বেসন, লেবুর রস মিলিয়ে মুখের ওপর ১৫ মিনিট রেখে প্রথমে হালকা গরম, পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

 

স্পর্শকাতর ত্বক-

নানা ধরনের প্রসাধন ব্যবহার করার ফলে অনেকের ত্বক স্পর্শকাতর (সেনসিটিভ) হয়ে ওঠে।

এমন ত্বকের জন্য টক দই খুব ভালো। টক দই, সয়াবিনগুঁড়া দিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগালে ত্বক ভালো থাকবে।

এ ছাড়া বেশি করে পানি পান করতে হবে। সঙ্গে মৌসুমি সবজি ও ফল, যেমন গাজর, মাল্টা, অরেঞ্জ, আমড়া খেলে ত্বক ভালো থাকবে।

 

 

চুলের জন্য প্যাক-

 

রুক্ষ চুলের জন্য: দুধ, মধু ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মাথায় ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। যার যার চুলের দৈর্ঘ্যের ওপর প্যাকের পরিমাণ নির্ভর করবে।

 

সব ধরনের চুল: টক দই ১ কাপ, পাকা কলা ১টা, মেথি ১ টেবিল চামচ ও মধু ১ টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে মাথায় ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

এ ছাড়া তেলের সঙ্গে লেবুর রস ও ভিটামিন ই তেল দিয়ে মাথার চুল মালিশ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

 

 

লেখক: রাহিমা সুলতানা, আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ।