কিভাবে সাজাবেন ছোট ফ্ল্যাট ?
আজকাল ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের বসতবাড়ির গন্ডি। অর্থাৎ ছোট ছোট পরিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট ফ্ল্যাট। অল্প জায়গা তাতে কি সুন্দর পরিকল্পনা আর রুচিশীল মননের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ছোট ফ্ল্যাটটি। ইনটেরিয়র ডিজাইন বা বড় বাজেট নয়, প্রয়োজন শুধু সুষ্ঠু পরিকল্পনার। যারা নিজস্ব রুচি আর চিন্তায় সাজাতে চান বাবুই পাখির নীড়, তাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী।
আজকাল সীমিত জায়গায় ৬৫০ থেকে ৮০০ স্কোয়ার ফুটের মধ্য তৈরি হচ্ছে ছোট ফ্ল্যাটগুলো। দুই বেড, দুই বাথ, কিচেন, ড্রইং, ডাইনিং আর এক কিংবা দুটি ব্যালকনি এই মিলিয়ে সাজানো থাকে ফ্ল্যাটগুলো। এমন সব ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র করার সময় খেয়াল রাখতে হবে অল্প জায়গায় কীভাবে আসবাবকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা যায় সেদিকে। এসব ফ্ল্যাটের বেডরুমগুলো সাধারণত ১০০ বাই ১০০ হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ঘরজুড়ে কেবিনেট করলে ঘরটি ছোট হয়ে যাবে। তাই যে কোনো একটি দেয়ালে ১৮ ইঞ্চি চওড়া করে ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত ওয়াল কেবিনেট করার পরামর্শ দিলেন নাসরিন চৌধুরী। কেবিনেটের এক পাশে মিরর দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সিস্টেম করে নেওয়া যায়। ওয়াল কেবিনেটের ফলে প্রচুর জিনিসপত্র এতে রাখা যাবে। ফলে বাড়তি আলমারি আর ওয়ার্ডরোব রাখার প্রয়োজন হবে না।
ঘরের এক পাশে সাড়ে পাঁচ ফুট বাই ছয় ফুট খাট রাখলে সামনে যে তিন ফুট জায়গা থাকে সেখানে বসার জন্য সোফা রাখা যেতে পারে। তবে দেড় ফুটের বেশি চওড়া সোফা বানানো যাবে না। কেউ যদি বেডরুমে টিভি রাখতে চান সে ক্ষেত্রে এক পাশের দেয়ালে ওয়াল পেপার দিয়ে তাতে এলইডি টিভি রাখলে দেখতে ভালো লাগবে।
ছোট ফ্ল্যাটের আসবাব হবে স্লিম। জায়গা কম তাই ফার্নিচার বানাতে হবে স্লিম ফিট করে। সোফা চাইলে বক্স করে বানানো যায়। ফার্নিচারের ভেতরে স্টোরেজ করার ব্যবস্থা করলে শিশুদের খেলনাসহ অনেক জিনিস গুছিয়ে রাখা যায়।
শিশুদের ঘরেও ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত কেবিনেট করা যায়। কেবিনেটের সঙ্গে অ্যাটার্স্ট করে আড়াই থেকে তিন ফুটের একটা টেবিল তৈরি করে নিতে হবে। পড়ার সময় এটি খুলে পড়তে বসা যাবে অন্য সময় এটি ক্যাবিনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। শিশুদের বেডটা লো-লাইটের হলে ভালো হবে। ঘরের এক পাশে স্লিম করে বুক সেলফ তৈরি করতে পারেন। শিশুদের ঘর একটু খোলামেলা রাখা প্রয়োজন।
এবার নজর দেওয়া যাক ড্রইং আর ডাইনিং রুমের দিকে। এসব ফ্ল্যাটের ড্রইং আর ডাইনিং রুম কখনো আলাদা হয় আবার কখনো লম্বা একটা স্পেস থাকে। ড্রইংরুমে সোফা নিজস্ব নকশা অনুযায়ী তৈরি করে নিতে হবে। তবে বেশি জায়গা নষ্ট করা যাবে না। দেয়ালের এক পাশে খোলা কেবিনেট তৈরি করে নিলে এতে নানারকম শোপিস দিয়ে সাজালে ভালো লাগবে। মাঝখানে এলইডি টিভি রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। ঘরের রঙ হবে হালকা। দরজা-জানালার গ্রিলগুলো অফহোয়াইট করে নিলে ভালো লাগবে। ফর্নিচার হবে উজ্জ্বল। সোফার কাভার, কুশন আর পর্দা বেশ কালারফুল হলে ভালো দেখাবে। ড্রইংরুমের একটা কর্নার স্পট লাইট দিয়ে এর নিচে আর্টিফেসিয়াল প্লান্টস দিয়ে সাজালে দেখতে ভালো লাগবে। তবে সময় করে ধুলোবালি পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
দেয়ালে যদি কেউ ওয়াল পেপার লাগাতে চান, তবে লাইট কালার লাগানোর কথা জানালেন নাসরিন চৌধুরী। ড্রইংরুমের যে পাশের দেয়ালে বেশিরভাগ অংশ খালি তাতে ওয়াল পেপার লাগানো যেতে পারে। ছোট ফ্ল্যাটে ওয়াল পেইন্টিং যেন খুব বেশি বড় না হয় সে বিষয়টিও নজরে রাখতে হবে। ঝাড়বাতি দেড় বাই দেড় অথবা দেড় বাই দুই হলে ভালো দেখাবে।
ডাইনিং টেবিলটিও এমনভাবে তৈরি করে নিতে হবে, যেন সব সময় চার সিটের হলেও গেস্ট এলে যেন ছয় সিট কাভার দিতে পারে। রান্নাঘরে যতটুকু পারা যায় স্টোরেজের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। যাতে রান্নার হাঁড়িপাতিল সহজে দেখা না যায়। বারান্দাটা সাজাতে পারেন ছোট ছোট সজীব প্ল্যান্টস আর মাটির শোপিস দিয়ে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ডেকোরেটিভ মিরর দিয়ে সাজালে ঘর একটু বড় দেখাবে। যদি ঘরে ঢুকতে ছোট করিডর থাকে, তবে সেখানকার দেয়ালে মিরর সেট করতে পারেন। নিজস্ব মনন আর ডিজাইনারের পরামর্শ দুইয়ে মিলে আপনার ছোট ফ্ল্যাটটি সাজিয়ে তুলতে পারেন অনিন্দ সুন্দর করে।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়
ছবিঃ সংগৃহীত