অফিসে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা
ইন্টারনেট একটি শক্তিশালী যোগাযোগমাধ্যম। আপনি চাইলে অফিসে এর সদ্ব্যবহার বা অপব্যবহার দুটিই করতে পারেন। কিছু বিষয় আছে, যা আপনার ক্ষতি করবে, আবার কাজ আদায় করতে সহায়তা করবে। তাই অফিসে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে রইল ১০ পরামর্শ—
১. অনেকে অফিসে ঢুকে নিজের চেয়ারে বসেই শেয়ার মার্কেট, ফেসবুক বা ব্যক্তিগত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে লগ ইন করেন, এটা ঠিক নয়। অফিসের সময়টুকু অফিসকে দিন। এতে যতটা না উপকার অফিসের হবে, তার চেয়ে বেশি উপকার হবে আপনার। অফিসে থাকা অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহারে খেয়াল রাখুন, সেটা কোনো না কোনোভাবে অফিসের কাজে লাগছে কি না।
২. অফিসের কাজে আপনার দক্ষতা বাড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহার করুন। আপনি যে বিভাগেই কাজ করুন না কেন, ইন্টারনেট আপনার প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। শিখুন কিভাবে এই সমৃদ্ধিশালী তথ্যভাণ্ডারকে কাজে লাগানো যায়।
৩. অফিসের ইন্টারনেট ব্যবহার করে চাকরি খুঁজবেন না। প্রশাসন টের পেলে আপনার ভবিষ্যত্ সম্ভাবনার পথ স্থবির হয়ে যেতে পারে। সুতরাং অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বাসায় অথবা নিজের মোবাইলে করুন।
৪. অফিসে কোনো অবস্থায়ই আপনার কম্পিউটারে ই-মেইল বা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলে রেখে যাবেন না। পাঁচ মিনিটের জন্যও না। এতে আপনার তথ্যসংক্রান্ত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। চলে যাওয়ার সময় অবশ্যই যথাযথভাবে লগ-আউট করে যাবেন। অন্যথায় বিপদের আশঙ্কা থাকে।
৫. অনেকে অফিসের হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যবহার করে গান, সিনেমাসহ অনেক বড় বড় ফাইল ডাউনলোড দিয়ে থাকেন। এতে অফিসের কাজে বিঘ্ন হতে পারে। সতর্ক থাকুন। পারতপক্ষে একান্ত ব্যক্তিগত কাজ অফিসের ইন্টারনেটে না করাই ভালো। যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে সংক্ষিপ্ত আর দ্রুত করুন।
৬. আপনার অফিসে যদি কোনো ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) বলে কোনো বিভাগ থাকে তাহলে জেনে রাখবেন, তারা আপনার প্রতিটি ক্লিকের ওপর নজরদারি করার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং আপনি আপনার কার্যক্রম সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
৭. আপনার অতিমূল্যবান নথি, প্রতিবেদন, প্রেজেন্টেশন, সিভি, ছবি, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নানা ধরনের সনদপত্রের স্ক্যানকপি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নথি ই-মেইলে সংরক্ষণ করুন। যতটা সম্ভব ইন্টারনেট ও ই-মেইলকে আপনার তথ্যভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে এই তথ্য সহজে খুঁজে পেতে আপনাকে বেগ পেতে হবে না।
৮. অফিসে ইন্টারনেটের অপব্যবহার হতে দেখলে সহকর্মীকেও সতর্ক করুন। যাতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান। তাতে কাজ না হলে প্রশাসনকে অবহিত করুন। অফিসকে সুরক্ষিত রাখা শুধু সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব।
৯. প্রতিদিন কিছু দৈনিক পত্রিকায় ইন্টারনেট-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ টিপস থাকে। খেয়াল রাখুন, এগুলো আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরো নিরাপদ, সহজ ও কার্যকর করবে।
১০. অফিসের কাজকে আরো সহজ ও সুশৃঙ্খল করার জন্য এখন অনেক সফটওয়্যার ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়। বিশেষ করে অ্যাসাইনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ওয়ার্কফ্লো ম্যানেজমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি সংক্রান্ত। এভাবে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করুন। অফিসে নিজের কাজের গুণগত মানকে আরো বাড়িয়ে তুলুন।
ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন বিভাগের জন্য পাঁচটি পরামর্শ—
১. অফিসে নিজস্ব সার্ভার ব্যবহার করুন। অফিস কার্যক্রম তদারকিতে এর কোনো বিকল্প নেই।
২. অফিসে ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারী কর্মকর্তাকে প্রথমে সতর্ক করুন। তারপর প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিন। তার পরও কাজ না হলে যেসব সাইটে কর্মকর্তারা বেশি ঢুকে অফিসের কাজের সময় নষ্ট করেন, সেসব সাইট লক করে দিন।
৩. অফিসের অসন্তুষ্ট অনভিজ্ঞ কর্মকর্তারা অফিসের ইন্টারনেটের অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেন। তাঁদের সঠিক পথে চলার জন্য উত্সাহিত ও সতর্ক করুন।
৪. সব সময় সব কর্মকর্তার কার্যক্রম নজরদারি করুন। প্রয়োজনবোধে পরিচালকদের কার্যক্রমসহ। শাস্তিযোগ্য অপরাধের শাস্তি নিশ্চত করুন এবং তা যেন দৃষ্টান্তমূলক হয়।
৫. সবার ওপরে অফিসের স্বার্থ। ইন্টারনেটকে যাতে কর্মকর্তারা অফিসের কাজে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য অফিসে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত