হলুদে ত্বকের যত্ন
সাধারণভাবে সবাই এটাকে মসলা হিসেবে জানলেও এর অবস্থান শুধু রান্নাঘরেই আটকে নেই। অনেক আগে থেকেই রূপচর্চার জন্য ব্যবহার হয় হলুদ। তাই এটাকে পরীক্ষিত ভেষজ রূপচর্চার উপকরণও বলা যায়। রূপের যত্নে এখন আপনি ভরসা রাখতেই পারেন হলুদের ওপর। তবে কিছু সচেতনতাও জরুরি।
বিন্দিয়া’স এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপ পরামর্শক শারমিন কচি জানালেন সেই বিষয়েই নানা তথ্য—হলুদ ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণ র্যাশ দূর করতে এবং ফাঙ্গাস ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। নিজেকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে কাঁচা হলুদ খেয়েও উপকার পাবেন।
- তবে হলুদ সরাসরি ত্বকে মাখা উচিত নয় বলেও সতর্ক করেন তিনি। শারমিন কচি বলেন, হলুদ সব সময় অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর দিতে হবে খুবই অল্প পরিমাণে।
ব্রণ দূর করতে হলুদের সঙ্গে নিম পাউডার, চন্দনের গুঁড়া আর মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। লোমকূপের তেল দূর করতে সাহায্য করে হলুদ। - চন্দনের গুঁড়া, কমলা বা মাল্টার রসের সঙ্গে অল্প হলুদ ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে লোমকূপের ভেতরের তেল দূর হয়ে ত্বক স্বাভাবিক হবে।
- শুষ্ক ত্বকের জন্য হলুদের গুঁড়া, কমলা বা মাল্টার রস, ডিমের সাদা অংশ ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে হলুদ। হলুদের গুঁড়া, মাষকলাইয়ের ডালের সঙ্গে টমেটোর রস বা কমলার জুস দিয়ে মুখে লাগাতে হবে। এই মিশ্রণ কিছুক্ষণ ত্বকে রেখে কুসুমগরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। - হলুদের সঙ্গে চন্দন বা ময়দা মিশিয়ে চোখের নিচে লাগালে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হবে।
- শরীর থেকে স্ট্রেচমার্ক দূর করতে হলুদের সঙ্গে তেল ও সুজি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্ক্রাবিংয়ের কাজটাও হবে।
হলুদের সঙ্গে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) মেশালে জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। রোদে পোড়া ভাবও দূর করে এই মিশ্রণ। - দুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিলিয়ে খেলে চেহারায় উজ্জ্বলতা আসে। দুধের সরের সঙ্গে অল্প পরিমাণ হলুদ মিলিয়ে লাগাতে পারেন ত্বকেও।
ত্বকের শুধু হলুদ লাগানোর পরে রোদে গেলে ত্বক বার্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য কিছু না কিছু মিলিয়ে লাগাতে হবে। হলুদ দীর্ঘদিন সংগ্রহ করে রাখতে চাইলে ভালো করে শুকিয়ে গুঁড়া করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই গুঁড়া করার পর আবারও ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, ত্বকের জন্য কোনো কিছুই বেশি ব্যবহার করা ঠিক না। তাহলে ত্বকের স্বাভাবিক তেলটাও নষ্ট হয়ে যায়। সপ্তাহে দুই দিনের বেশি কোনো প্যাক ব্যবহার করলে সেটা ত্বকের ক্ষতিই করে।
কাঁচা হলুদ যে কখনোই সরাসরি ব্যবহার করা ঠিক না সেটা মনে করিয়ে দিলেন রাহিমা সুলতানাও। তাঁর পরামর্শ—যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক তাঁরা কাঁচা হলুদ, দুধের সর, মধু মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ত্বক শুষ্ক হলে এর সঙ্গে যোগ করে নিতে পারেন জলপাই তেল বা নারকেল তেল। এই মিশ্রণ সানট্যান ও দাগ দূর করবে।
ব্রণের সমস্যা থাকলে কাঁচা হলুদ, টকদই ও নিমপাতা মিশিয়ে লাগাতে পারেন। স্বাভাবিক ত্বকে কাঁচা হলুদ, দুধ ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
সকালে কুসুমগরম দুধে কাঁচা হলুদের গুঁড়া বা রস মিশিয়ে খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। ফলে ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল হয়। চাইলে দুধ, হলুদ ও মধু দিয়ে মিল্ক শেক বানিয়ে খেতে পারেন।দিনশেষে আমাদের প্রকৃতির কাছেই ফিরতে হবে। তাই নিজেকে সুন্দর করার ভারও দিতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানকেই।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
ছবিঃ সংগৃহীত