ওড়নার ফ্যাশন
‘মজার ব্যাপার লক্ষ করেছেন? দেখবেন, বয়সভেদে ওড়না পরার ঢংও কিন্তু ভিন্ন’—কথা বলার শুরুতেই বললেন ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। বললেন, ‘শুধু তা-ই নয়, কারো ওড়না লম্বা, তো কারোটা ছোট। কারো চওড়া, তো কারো সরু। আবার একই তরুণীর বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে রয়েছে ভিন্ন সব ওড়না।’ জানালেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভারী কাজের ওড়নার কদর বেড়েছে। অনেকেরই এখন ওড়নার জন্যই কাবার্ডে রয়েছে আলাদা ড্রয়ার। হয়তো তারা পুরো সেট না কিনে কুর্তির সঙ্গেই নকশাদার ওড়না পরে নিচ্ছেন। কেউ মিলিয়ে পরছেন, আবার হয়তো একেবারে ভিন্ন রঙা কন্ট্রাস্টের ওড়না পরছেন। এতে কিন্তু খরচও কমে যাচ্ছে। পুরো পোশাক সেট কেনার বাজেট কমিয়ে শুধু দামি একটা ওড়না কিনলেই চলছে। দুই-তিনটি পোশাক অনায়াসে মিলে যাচ্ছে। ফ্যাশন হাউসগুলোও এখন ওড়না নিয়ে নানা নিরীক্ষা করছে। ম্যাটেরিয়াল, মোটিফ, রঙ, নকশা—সব কিছুতেই আসছে নতুনত্ব। ওড়নায় এখন নানা ভ্যালু অ্যাড হচ্ছে। একই পোশাকে ভিন্ন ওড়নায় ভিন্ন লুক আনা যাচ্ছে বলে তরুণীদের কাছেও দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওড়নার ফ্যাশন। শুধু তরুণীরাই নন, এখন ভিন্ন বয়সী নারীরা শাড়ির সঙ্গেও ওড়না পরছেন নানা স্টাইলে।
রং, নকশা আর ম্যাটেরিয়াল-
শুধু ওড়নার সুবাদেই হারিয়ে যাওয়া নানা নকশা ফিরে আসছে—জানালেন বিপ্লব সাহা। রঙে প্রাধান্য পাচ্ছে উজ্জ্বল, নজরকাড়া রং। লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা, কালো, ময়ূরকণ্ঠী নীল, নেভি-ব্লু এমন সব রং বেছে নিচ্ছেন ডিজাইনাররা। কেননা, সময় এখন কালার ব্লাস্টের। নকশায় কটকি, বেনারসি, কাঁথাস্টিচ, উলেন ফ্লোরাল স্টিচ—সব চলছে। একটি পূর্ণাঙ্গ শাড়ি তৈরিতে একজন ডিজাইনারের যে শ্রম বা মেধা খাটাতে হয়, এখন ওড়নাও তা দাবি করছে।
চাহিদা আছে বলে ওড়নার প্রতি সেই মমতা ডিজাইনাররা দেখাচ্ছেনও। জরি-চুমকির জারদোসি কাজ যেমন চলছে ওড়নার জমিনে, তেমনি বেনারসির জরি সুতাও সমানতালে জায়গা করে নিচ্ছে। সুতার ভরাট কাজ কিংবা কাঁথা সেলাইয়ের ফোঁড়ও এখন ওড়নায় উঠে এসেছে। একই সঙ্গে ব্লক, বাটিক, কারচুপি—চলছে সবই। এনকি মিক্স মিডিয়া, টাই-ডাই, ভেজিটেবল ডাই দিয়েও হচ্ছে ওড়নার নকশা।
ম্যাটেরিয়ালে একদম খাঁটি সুতি যেমন আছে, তেমনি পিওর সিল্ক, হাফসিল্ক, ভয়েল, তাঁত, বেনারসি সব ম্যাটেরিয়ালই ব্যবহার করা হচ্ছে। কখনো কখনো ম্যাটেরিয়াল নিয়েও করা হচ্ছে নানা নীরিক্ষা। এক ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে অন্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সম্পূর্ণ নতুন এক ওড়নাও হচ্ছে।
বন্ধুর আড্ডা বা অনুষ্ঠান-
ওড়নার স্টাইলে যতই নীরিক্ষা চলুক; বন্ধুর আড্ডায় আপনি যে সাজপোশাক বেছে নেবেন, অনুষ্ঠানবাড়িতে যে সে সাজে যাবেন না—এ কথা বলে না দিলেও চলে। একরঙা কুর্তির সঙ্গে মিলিয়ে বা কন্ট্রাস্টে যেকোনো ওড়না পরে মাতিয়ে দিতে পারেন বন্ধুর আড্ডা-আসর। একটু ভারী কাজের ওড়না যেমন : বেনারসি, সিল্কে কাঁথা-স্টিচ বা ফ্লোরাল-উলেন ফ্লোরাল স্টিচ পরে নির্দ্বিধায় চলে যেতে পারেন বিয়েবাড়ি বা যেকোনো অনুষ্ঠানের স্থানে। তবে মাথায় রাখুন অনুষ্ঠানের ধরন। রং বেছে নিন সেটা বুঝে।
সাজ কেমন চাই-
ওড়নার সঙ্গে কেমন সাজ মানাবে ভালো—জানালেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। দিনের বেলায় শুধু একটু কাজলেই এঁকে নিন চোখ। পরনের ওড়নাটিই যেহেতু ভারী কাজের, এই সাজেই স্নিগ্ধ লাগবে। লিপস্টিক লাগাতে ভুলে গেলে অবশ্য চলবে না। ওড়নার রঙে প্রাধান্য পেয়েছে যে রং তার সঙ্গে মিলিয়ে রাঙিয়ে নিতে পারেন ঠোঁট। অথবা একেবারেই কন্ট্রাস্ট কোনো রং বেছে নিতে পারেন। আর রাতের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চোখ সাজাতে পারেন গাঢ় সাজে। ডিপ শেড বা স্মোকি করতে পারেন চোখের সাজ। সঙ্গে কাজল বা লাইনারের টান। মাশকারায় ঘন করে নিতে ভুলবেন না চোখের পাপড়ি।
বহরে বেড়েছে ওড়না, কমে সরুও হয়েছে কখনো নকশার দাপট বজায় রাখতে। নাম নিয়েছে স্টোল। ফ্যাশন যা-ই হোক, স্টাইলই আসল। নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সেটাই প্রধান অস্ত্র। ওড়না বাছাইয়েও মনে রাখুন তা।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত