রিচার্ড ব্রানসনের  সাফল্যের জন্য ১০টি সূত্র

রিচার্ড ব্রানসনের সাফল্যের জন্য ১০টি সূত্র

ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন। যুক্তরাজ্যের এই ধনকুবের মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল থেকে ড্রপআউট হয়েছিলেন। ডাইস্লেক্সিয়া নামক একটি রোগের কারণে ঠিকমতো পড়তে পারতেন না। এই সীমাবদ্ধতা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ১৬ বছর বয়স থেকেই তিনি ব্যবসা শুরু করেন। গানের প্রযোজনা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণ পর্যন্ত ছড়িয়েছে তাঁর ব্যবসার ব্যাপ্তি।

১. স্বপ্নের সঙ্গে হাঁটুন-

আপনি কখনোই সফল হতে পারবেন না, যদি আপনি আপনার কাজকে না ভালোবাসেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠুন ভালোবাসার কাজটি করার রোমাঞ্চ নিয়ে। ব্র্যানসন বলেছেন, ‘যারা ভালোবাসার কাজটি করে সময় পার করে, তারা তাদের জীবনটা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদেরই মূলত সাহস আছে সেই স্বপ্নের পেছনে হাঁটার এবং ঝুঁকি নেওয়ার।’ এই প্রসঙ্গে প্রথিতযশা ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটও একমত। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো কাজে সফল হতে হলে সেই কাজের প্রতি আসক্তি বা ভালোবাসা থাকতে হবে।’

২. ভালো কাজ করুন-

মানুষের জন্য ভালো কিছু করার কথা বলেছেন ব্র্যানসন। তিনি বলেছেন, আপনি যদি মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে না পারেন তবে নিজের ব্যবসাতেও কিছু করার সম্ভব হবে না। ব্র্যানসনের মতে, এটা শুধু ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে নয়, নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্যও একই বিষয়টি প্রযোজ্য। যেমন বলা হয়, একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি। সে রকম এক জোড়া কিনলে আপনি আরেক জোড়া দান করুন। সাম্প্রতিক সময়ের অনেক সফল প্রতিষ্ঠানই এই নীতিতে কাজ করে।

৩. আস্থা রাখুন-

আপনি যদি নিজের কাজ নিজে সমর্থন করতে না পারেন, তবে অন্য কেউও আপনাকে সমর্থন করবে না। ব্র্যানসন বলেন, ‘আপনি যদি আপনার আইডিয়া নিয়ে গর্বিত হতে না পারেন কিংবা আপনার পরিকল্পনা বিশ্বাস করতে না পারেন, তবে অন্য কেউ কেন আপনার আইডিয়াকে সমর্থন করবে, বিশ্বাস করবে?’ ব্র্যানসনের এমন চিন্তাভাবনার সঙ্গে ধনকুবের মার্ক কিউবানও একমত। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো প্রতিষ্ঠান আপনি তৈরি করবেন না, যেটি আপনি ভালোবাসেন না কিংবা যার প্রতি আপনার আগ্রহ নেই।’ উদ্যোক্তাসংক্রান্ত একটি কলামে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনার যদি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিংবা বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তবে বুঝতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আপনার ভালোবাসা নেই।’

৪. আনন্দে থাকুন-

এটা অনেকেই হয়তো মানবেন না। কিন্তু ব্র্যানসন বলেছেন, আনন্দ করা বা আনন্দে থাকা হচ্ছে যেকোনো সফল ব্যবসায়ী হওয়ার অন্যতম নিয়ামক। তিনি লিখেছেন, আপনি যদি কোনো কাজে আনন্দ না পান তবে আপনার উচিত অন্য কোনো কাজ করা। এই আনন্দে থাকার ধারণাই ব্র্যানসনকে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি এমন ভাবনা থেকে ভার্জিন মিউজিকের প্রধান নির্বাহীর কাছে গিয়েছিলেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের এক-তৃতীয়াংশ দিয়ে একটি এয়ারলাইনস কোম্পানি খুলতে বলেছিলেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন এটা থেকে ভালো কিছু হবে। যদিও ভার্জিন মিউজিক এটা করতে রাজি হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি জেদ ধরে এটা করেছিলেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইনস কোম্পানি ভার্জিন আটলান্টিক সফল হয়েছে।

৫. হতাশা নয়-

নতুন কোনো ব্যবসা শুরু, বেলুনে করে বিশ্ব ভ্রমণ কিংবা নৌকায় করে সাগর পাড়ি—রোমাঞ্চকর যেকোনো ক্ষেত্রেই এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যা হতাশ করে দিতে পারে। ব্র্যানসন এই সব মুহূর্তে লড়াই করতে বলেছেন। তিনি নিজে এসব মুহূর্তে সাফল্য পেতে নিজেকে তাড়িত করেছেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত কিংবা কর্মময় জীবন—দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ব্র্যানসন এগিয়ে গেছেন। সাফল্য-বিষয়ক একটি গবেষণা করেছিলেন মনোবিজ্ঞানী অ্যাঞ্জেলা ডাকওয়ার্থ। তিনি গবেষণার মাধ্যমে একটি সূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটি হলো, যেকোনো সাফল্যের জন্য একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। অ্যাঞ্জেলা ডাকওয়ার্থ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘পরিশ্রম ছাড়া আপনার প্রতিভা কিছুই না।’ অর্থাৎ পরিশ্রমের মাধ্যমে এই প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হবে।

৬. নতুন চ্যালেঞ্জ নিন

 ‘ভাবনাগুলো যদি লিখে না রাখেন, সকাল না হতেই সেগুলো আপনার মাথা থেকে হারিয়ে যেতে পারে।’ বলেছেন ব্র্যানসন। তাই ব্যবসাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য যখনই মাথায় নতুন কোনো ভাবনা আসে, তিনি সেটা লিখে রাখেন। ভাবনাটা ছোট হোক, বড় হোক—লিখে ফেলুন। এরপর সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন। কারণ, আপনি জানেন না কোনটি কাজে লেগে যাবে।

৭. প্রতিনিধি তৈরি করুন-

সব কাজ আমি একা করতে পারব না, অনেক উদ্যোক্তার জন্য এটা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্র্যানসন বলেন, ‘যে কাজ আপনি করতে পারেন না, সেটার জন্য জুতসই একটা লোক খুঁজে পেলে আপনার কাজ সহজ হয়ে যায়। তখন আপনি ভবিষ্যতের পরিকল্পনার দিকে মনোনিবেশ করতে পারবেন।’ এ প্রসঙ্গে কিথ ক্যামেরন স্মিথ তাঁর দ্য টপ টেন ডিসটিঙ্কটশনস মিলিয়নিয়ারস অ্যান্ড দ্য মিডল ক্লাস বইয়ে লিখেছেন, ‘কাজটা আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ পারবে না, এটা ভাবা একধরনের মূর্খতা। মনে রাখবেন, পৃথিবীটা মেধাবী লোকে ভরপুর।’ এটা ভাববেন না যে আপনি হাত না দিলে কাজটা ঠিকঠাক মতো হবে না। যাঁরা আপনার সঙ্গে কাজ করেন, তাঁদের ওপর ভরসা রাখুন। একেই বলে প্রতিনিধি তৈরি করা। এর মাধ্যমে আপনি ভালো ফল পাবেন।

৮. দলের অভিভাবক হোন-

আপনার সাফল্যের পাশাপাশি আপনার দলের মানুষের সাফল্যও গুরুত্বপূর্ণ। দলের সদস্যদের সৃজনশীল ভাবনাকে স্বাগত জানান। তাঁর মতে, ‘আপনার কর্মীরা যদি আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে পারে এবং একে অপরকে সাহায্য করতে পারে, তবেই আপনি ভালো কাজ পাবেন।’ এ ছাড়া ভালো কর্মী বাছাইও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, ‘এমন কর্মী খুঁজে বের করুন, যারা অন্যদের থেকে পরিশ্রমী। কর্মীদের বেশি সমালোচনা করা থেকে বিরত থেকে বরং তাদের ভালোবাসুন। তারা যে কাজটি করে সেটিও ভালোবাসুন।

৯. বিরতি দিন-

সাফল্য, রোমাঞ্চ নিজে থেকেই আপনার হাতে এসে ধরা দেবে না। আপনাকে এটি খুঁজে বের করতে হবে। ব্র্যানসন বলেন, ‘সাফল্যের জন্য এই অনুসন্ধান চালাতে না পারলে সারা জীবন আপনাকে একটি পর্দার সামনে বসে কাটাতে হবে। প্রতিদিন একই ভাবে টিভি কিংবা কম্পিউটার চালু কিংবা বন্ধ করতে করতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে।’ এই কর্মময় জীবনে মাঝেমধ্যে বিরতি দিন। এতে আপনি জীবনী শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন। তাই মাঝেমধ্যে বেড়িয়ে আসুন।

১০. মানুষের ভুল ভাঙুন-

যখন কেউ আপনার সম্পর্কে বাজে কথা বলছে, তখন কিছু না বলে কাজ করুন। প্রমাণ করে দিন তারা ভুল বলছে। সমালোচনা গ্রহণের জন্য সব সময় নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। ব্র্যানসন বলেন, ‘আপনার সাফল্য অনেকেই বাঁকা চোখে দেখবে। এই সংকট উত্তরণের সব চেয়ে ভালো উপায় হলো, এদের উপেক্ষা করা। তবে এটাও ঠিক, আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা যা বলছেন ভুল বলছেন।’

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো

ছবিঃ সংগৃহীত