নতুন-পুরনো ধারার মিশেলে থাকবে ২০১৯ ফ্যাশন
সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফ্যাশনের পালাবদল চলতে থাকে। ২০১৮ পেরিয়ে এসেছে ২০১৯ সাল। নতুন-পুরনো ধারার মিশেলে আসবে হালফ্যাশন।
বিশ্বজুড়ে ফ্যাশনের ক্রমান্বয়ে পালাবদল দৃশ্যমান। তবে সেটি যে খুব দ্রুত হারহামেশাই ঘটে, তা নয়। এ পরিবর্তনটি বরং একটু ধীরেই হয়। আগের বছরের সঙ্গে কিছুটা মিল রেখেই চলে পরের বছরের পরিকল্পনা। এভাবে বেশ কয়েক বছর যাওয়ার পর চোখে পড়ে ফ্যাশনে একটি পরিবর্তন।
পোশাকের কাটিং, শেড এবং মোটিভ-
২০১৮ সালে পোশাক কাটিংয়ের ধরন নিয়ে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে গেছে, বিশেষ করে মেয়েদের কামিজ, লং ড্রেসগুলোয় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। দেশীয় পোশাকগুলোয় ওয়েস্টার্ন ধারা নিয়ে এসেছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এবার ক্লোয়াল মোটিভটা বেশি দেখা যাবে গত বছরের চেয়েও। ফিউশনও ছিল জনপ্রিয়তার খাতায়। ভ্যালু অ্যাড হিসেবে প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি ও জরির কাজ প্রাধান্য পাবে। গত বছর ডিজিটাল প্রিন্ট ছিল। সেটি এবার ব্যাপকভাবে দেখা যাবে। একই সঙ্গে ফুলেল প্রিন্ট। জামার হাতায় বৈচিত্র্যতা তো ছিলই। এবারও তা বজায় থাকবে। কাপড়ের ক্ষেত্রেও আসবে বেশ পরিবর্তন। গত বছর হালকা শেডটা পছন্দের তালিকায় একটু বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল। এবার ওই জায়গাটা দখলে নেবে একটু উজ্জ্বল রঙের শেড। যদিও মেয়েদের পোশাকের ধরন নিয়ে গবেষণাটা একটু বেশি হয়, তবুও শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবিতেও থাকবে টাই-ডাইয়ের প্রাধান্য।
২০১৯ সাল ঘিরে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে, এই বিষয়ে দেশের কয়েকটি স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল নতুন বছরে পোশাকের ফ্যাশন ট্রেন্ডঃ
লা-রিভ-
নতুন বছরে পোশাকের নতুনত্ব নিয়ে ‘লা-রিভ’-এর ডিজাইনার আফরিনা হাবিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েদের ফ্যাশনে তারা এবার নিয়ে এসেছেন লম্বা কোটি। এটিকে বলা হয় শ্রাগ। গত বছরও এটি ছিল। তবে এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে। ওই কোটিগুলো স্লিভ ছাড়া, হাফ স্লিভ ও ফুল স্লিভের রয়েছে। অনেক রঙও ব্যবহার করা হয়েছে এগুলোয়। তা টপস, কামিজ বা অন্য যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যাবে। কটিগুলো শর্ট ও লং দুই ধরনেরই হয়। আরেকটি পোশাক এসেছে। এটিকে বলা হয় টিউনিক। এটি এই সময়ে ট্রাভেল বা ঘুরতে যাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী। এগুলো লং, শর্ট দুই রকমই আছে। শর্টগুলো পালাজ্জো, ডেনিমের সঙ্গে পরা যায় আর লংগুলো ম্যাচিং লেগিংস, পালাজ্জো দুটির সঙ্গেই মানিয়ে যাবে। টিউনিকটি বিভিন্ন প্যাটার্নের হয়। এটি একটু ফতুয়া ধরনের হলেও কাটিংয়ে রয়েছে ভিন্নতা। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সময় লাইট জ্যাকেটটি চলছে। টি-শার্ট বা ক্যাজুয়াল শার্টও চলছে বরাবরের মতোই। বটমের জন্য জিন্স, ডেনিম রয়েছে এর সঙ্গে আর পাঞ্জাবি চলছে সব সময়ের জন্যই।
কে-ক্রাফট-
‘কে-ক্রাফট’-এর সিইও এবং ফ্যাশন ডিজাইনার শাহনাজ খান নতুন বছরের ফ্যাশন সম্পর্কে বলেন, ফ্যাশনের ক্ষেত্রে প্যাটার্নটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পোশাকের কাটিং কেমন হবে, সেটি। তিনি বলেন, এবার মেয়েদের ক্ষেত্রে ফ্রকের চেয়ে কামিজ কাটিংটা বেশি আসবে। টপস, কুর্তি এগুলোয় পরিবর্তন আসবে অনেক। স্লিভের ক্ষেত্রে ডিজাইন ও ধরনে বেশ পরিবর্তন আসবে। অনেক বেশি কারুকাজ না করে প্রিন্টটিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ফেব্রিকেও পরিবর্তন আসবে অনেক। ছেলেদের জন্য স্লিম ফিট পাঞ্জাবিটা এবার বেশি দেখা যাবে। এটি মাঝারি লম্বা হবে। শার্টের ক্ষেত্রে এখন ফ্লোরাল প্রিন্টটি থাকবে। স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্টে কাটিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন আসবে।
রং বাংলাদেশ-
‘রং বাংলাদেশ’-এর স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, আগের বছরের থেকে খুব বেশি পরিবর্তন আসলে দেখা যাবে না এ বছরেও। পোশাকের ক্ষেত্রে যেটা হয়, আমরা ওয়েস্টার্ন স্টাইলটা বেশি অনুসরণ করতে চাই।
তাই ওই পোশাকগুলোর ধরন মাথায় রেখে এবারও গাউনের মতো বিভিন্ন লেয়ার দিয়ে, নিচের অংশের কাটিংটা একটু পরিবর্তন করে, টপস যেগুলো আছে, সেগুলো লম্বায় একটু ছোট রেখে ডিজাইনগুলো করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, এখানে ওয়েস্টার্ন ঘরানার একটি মিশেল তৈরি হচ্ছে। ফেব্রিক কটন ও লিনেনই ব্যবহার করা হয় সাধারণত। তবে গার্মেন্টের কাপড় এবং চীন ও ইন্ডিয়া থেকে আসা কাপড়গুলো দিয়েও তৈরি হচ্ছে পোশাকগুলো।
অঞ্জন’স-
“অঞ্জন’স”-এর ডিজাইনার বকুলের সঙ্গে কথা হলে বলেন, এ বছর পোশাকে খুব বেশি যে পরিবর্তন আসবে, তা নয়। মেয়েদের জন্য আগের বছরের মতোই কাটের ক্ষেত্রে লেয়ার, পেছন দিকে একটু বেশি লম্বা, কোমর থেকে একটু ফিট হয়ে কুচি বা বড় ঘের, মাঝখানে চেইন কিংবা কোট দিয়ে বোতাম এগুলোই থাকছে। পালাজ্জোর সঙ্গে শর্ট টপস থাকছে। ছেলেদের ট্রেন্ডি ফ্যাশন বিষয়ে তিনি বলেন, একটু শর্ট স্লিম ফিট পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, কলারে কাটিংয়ে একটু ভিন্নতা এরকমই থাকবে।
সাজসজ্জা-
নতুন হালফ্যাশনের সঙ্গে হেয়ার কাট, সাজসজ্জাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই পোশাকের সঙ্গে কোন হেয়ার স্টাইলটি মানাবে, কী ধরনের মেকআপ হবে সেটি ভাবাও জরুরি। তবে চুলের কাটে লেয়ার, স্টেপ লেয়ার, ভলিউম এগুলোই সব সময়ের জন্য জনপ্রিয়। বিভিন্ন স্টাইলে সব ধরনের পোশাকেই মানিয়ে যায় এই হেয়ার কাটগুলো। আর হালকা মেকআপ ফ্যাশনে সব সময়ই মানানসই। খুব জাঁকজমক অনুষ্ঠান ছাড়া হালকা মেকওভারই মানিয়ে যায় সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই।
ফ্যাশন মানে বাজারে যে পোশাক এলো, সেটিই পরে ফেললাম তা নয়। ফ্যাশন হলো, কোন পোশাকটি আপনার সঙ্গে মানাবে, কোন রঙটি পরলে সুন্দর ও মার্জিত লাগবে সময়ের চাহিদার সঙ্গে এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে নিজেকে সাজানোই হলো ফ্যাশন।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়