ডেনিম জিন্সের হট লুক !
হোক বা ফরমাল ড্রেসিং-জিন্স কখনই ফ্যাশনের বাইরের অংশ ছিল না। দশক-শতাব্দীর বিভাজনে ডেনিম জিন্সে এসেছে আমূল পরিবর্তন। জিন্সে বদলেছে রঙ, ডিজাইন এবং প্যাটার্ন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোল পাল্টে ট্রেন্ডি করে তোলেন ডিজাইনাররা।
পরিবর্তনের হাওয়া, নতুনত্বের ছোঁয়া- এই রীতি নিয়েই যেন প্রতিটি জীবন। ফ্যাশনপাড়াও এর ব্যতিক্রম নয়। অতীতের সব পুরনো ঢং বদলে নতুন রূপে ধরা পড়বে অন্যের চোখে। এটাই হয়তো স্বাভাবিক। তেমনটাই দেখা গেছে ডেনিম জিন্সের প্যান্টে। ১৯৩০ সালের পুরনো জিন্স নানা রূপ বদলে আজকের ফ্যাশন দুনিয়ার হট লুকের পাশাপাশি চাহিদা তৈরি করেছে।
জিন্সের ইতিহাস-
জিন্সের সঠিক ইতিহাস না থাকলেও প্রচলিত রয়েছে লেভি স্ট্রস নামের এক ভদ্রলোক ১৮৫১ সালে জার্মানি থেকে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। সেখানে তার ভাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন মালামাল সাপ্লাই দিতেন। যার মধ্যে কাপড়ও ছিল। ১৯৫৩ সালে লেভি স্ট্রস সানফ্রান্সিসকোতে চলে যান। সেখানে ব্যবসা শুরু করেন। ১৮৭২ সালে লেভি স্ট্রসের সঙ্গে পরিচয় হয় জ্যাকব ডেভিস নামের এক দর্জির সঙ্গে। লেভি ও জ্যাকব একসঙ্গে মোটা কটনের কাপড় ব্যবহার করে তৈরি করেন জিন্স প্যান্ট। এই কাপড়কে জার্মান ভাষায় জিনিয়া বলা হয়, যা বর্তমানে জিন্স হিসেবেই পরিচিত। পরবর্তীকালে ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের দিকে জিন্স ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সে সময়কার একটি প্রতিবেদন দেখে অনুমান করা যায় যে, শুধু পুরুষ শ্রমিকদের জন্যই জিন্স তৈরি হলেও নারীদের জন্যও স্বল্প পরিমাণে জিন্স তৈরি করা হতো। জিন্সের সেই আদি রূপ যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এই ডেনিম জিন্সের জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও।
ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গী-
ফ্যাশন ট্রেন্ডের অন্যতম সঙ্গী জিন্স প্যান্ট। তরুণ প্রজন্মের ভীষণ পছন্দ জিন্স। ক্যাম্পাসের আড্ডা থেকে নানা পার্টিতে অনায়াসে সঙ্গী করে নেন জিন্স। আজকাল জিন্স প্যান্টে নজরকাড়া পরিবর্তন এসেছে। রুচি এবং চাহিদার প্রেক্ষিতে জিন্স প্যান্টে রয়েছে নানা রকমফের। বাজার ঘুরে দেখা মিলবে ব্যাগি জিন্স, ন্যারো শেপ, স্ট্রেট এবং স্ট্রিচ জিন্সের। ছেলেমেয়ে উভয়ের কাছে জিন্স প্যান্ট এখকার ট্রেন্ড হিসেবে পরিচিত। যে যার সাধ্যমতো সংগ্রহ করছে। দোকানিরাও এ কারণে বিভিন্ন বয়সের এবং বিভিন্ন ডিজাইনের জিন্সের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
জিন্সে রঙ বদলের খেলা-
বর্তমান ফ্যাশনে জিন্সের যে কত রকমের কালার রয়েছে তা বোধহয় গুনে শেষ করা যাবে না। আগে জিন্স প্যান্ট মানে কেবল নীল রঙকেই বোঝানো হতো। এখন সেই ধারা বদলে জিন্স প্যান্টে চলছে রঙের খেলা। ধোলাইয়ের মাধ্যমে জিন্সের চেহারা বদলে দেন ডিজাইনাররা। একেক ধরনের ধোলাইয়ে প্যান্টে একেক ধরনের রঙ ও নকশা তৈরি করা হয়। স্টোন ওয়াশ, ভিনটেইজ ওয়াশ এবং আইস ওয়াশে জিন্সগুলো রঙ বদলে নানা রূপ নেয়। যার মধ্যে কোনোটা দেয় পুরনো আবহ, কোনো কোনো প্যান্ট তো আনে টেলিভিশনের ঝিরিঝিরি পর্দার মতো ছিটছিট আবহ। তবে রঙ যেমনই হোক মাপ ভুল হলে দেখতে যেমন খারাপ লাগবে, তেমনি পরতেও লাগবে অস্বস্তি।
কাটিং-ফিটিংয়ে ডেনিম জিন্স-
আজকাল ছেলেমেয়ে উভয়ের কাছেই আঁটসাঁট ফিটিংয়ের স্কিনি জিন্স প্যান্টগুলো বেশ জনপ্রিয়। তবে এসব প্যান্টের প্যাটার্নে পরিবর্তন আনে ন্যারো শেপ এবং স্ট্রেট কাট। স্লিম ফিট জিন্স প্যান্টে আনে আরামদায়ক ভাব। সাধারণত স্ট্রিচ কাপড়ে তৈরি হয়ে থাকে এসব জিন্স। স্কিনি আর স্লিম ফিটের মাঝামাঝি মাপ হলো ট্যাপার্ড ফিট। যা সব ধরনের শারীরিক গড়নে মানিয়ে যায় সহজেই। এ ছাড়া কোমর থেকে পা পর্যন্ত পায়ের মাপ একই থাকে স্ট্রেইট ফিট জিন্স প্যান্টে। ডেনিমের ক্ষেত্রে এটা ঐতিহ্যবাহী ছাঁট। কেননা, জিন্সের শুরুটা হয়েছিল এই কাটের মধ্য দিয়েই। পায়ের নিচের অংশে ইলাস্টিক কাফ দেওয়া প্যান্টগুলোই জগার্স ফিটেড। হাঁটা ও দৌড়ানোর ক্ষেত্রে এই জিন্স বেশ আরামদায়ক।
দরদাম-
বাজারে বিভিন্ন দামে মিলবে জিন্সের প্যান্ট। ৫০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় যেমন পাওয়া যাবে তেমনি ১২০০ থেকে ১২০০০ টাকায়ও মিলবে নামি-বেনামি ব্র্যান্ডের জিন্সের প্যান্ট। যে কোনো শপিং মলে দেখা মিলবে নিত্যনতুন ডিজাইনের জিন্স প্যান্ট। প্রয়োজন শুধু নিজের পছন্দের জিন্সটি সংগ্রহ করা।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত