লুকে আনুন বৈচিত্র্য
প্রতিদিন একই রকম পোশাক-আশাক পরতে কারোই ভালো লাগে না। বিশেষত যারা প্রতিদিন অফিস করেন তাদের জন্য করপোরেট লুক ধরে রেখে একেক সময় একেক লুক আনাটা অনেকটাই কঠিন। চলার পথে মেয়েদের কোন সময়ে কী ধরনের লুক বৈচিত্র্য এনে দেবে সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন।
বৈচিত্র্যময় লুকের ক্ষেত্রে সবার আগেই আসে পোশাক-আশাকের কথা। আর পোশাক আশাকের সঙ্গে মানানসই অল্পখানি সাজ পাল্টে দেয় পুরো দৃশ্যপট। এখন গরমের সময়। গ্রীষ্মেও প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। তাই এখনকার সময়ে আরামদায়ক পোশাকের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের পথ ধরে ফ্যাশনে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি আর সালোয়ার কামিজের পাশে দোর্দ- প্রতাপে জায়গা করে নিয়েছে জিন্স, টি শার্ট, কুর্তি, সিঙ্গেল কামিজ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে ম্যাক্সি ও ফতুয়া টাইপের পোশাকেও আজকের নারীরা দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে সব পোশাকেই যে ভিন্ন ভিন্ন লুক আসে বিষয়টি এমন নয়। কিছু কিছু পোশাক আছে যেগুলো একই সঙ্গে করপোরেট ক্যাজুয়াল হিসেবে গণ্য হয়। সেগুলোর দিকেই একটু চোখ বুলানো যাক।
বাজারে সুতি কাপড়ের কুর্তি এখন সব হাউসেই পাওয়া যায়। এসব কুর্তি দেশীয় ঐতিহ্যের ধারক। আবার আরাম ও ফ্যাশনেও দারুণ। বৈচিত্র্যময় রং ও নকশার কারণে এসব কুর্তি নারীদের পছন্দের পোশাকে পরিণত হয়েছে।
আবার সালোয়ার-কামিজ ও কুর্তির পাশাপাশি আরও কিছু পোশাক আপন করে নিয়েছে মেয়েরা। সেগুলো হচ্ছে সিঙ্গেল কামিজ বা টপস। প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মিশেলে এসব টপসের ডিজাইনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। কোনোটা বডিফিটিং আবার কোনো ঢোলা। কিছু যেমন লম্বা লেন্থের হয়, আবার কিছু পাওয়া যায় খাটো ধরনের। এসব টপসের সঙ্গে কেউ কেউ প্লাজো পরেন। আবার কেউ কেউ ব্যবহার করেন জিন্স, ট্রাউজার।
পোশাক নির্বাচনের পর নির্বাচন করতে হবে মানানসই অনুষঙ্গ। প্রতিদিন ব্যবহারের অ্যাকসেসরিজগুলো বেছে নিন। স্কিনি চেইন কাফ, নেকলেস, ব্রেসলেট ছাড়াও চলতে পারে চেইনের অ্যাঙ্কলেট। এ ছাড়া বডি চেইন, সেপটাম রিং, ইয়ার কাফ দিয়েও ট্রেন্ডি হয়ে ওঠতে পারেন।
আপনার পছন্দের পোশাক অনুষঙ্গ বাছাইয়ের পর আপনাকে ঝটপট সাজের কৌশলগুলো জানতে হবে। প্রথমেই ফ্রেশ হয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মুখ, গলা, হাতে বরফ ঘষে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরিকল্পনা মতো পোশাক পরুন। মুখে হালকা করে ফাউন্ডেশন দিয়ে একটু ফেস পাউডার লাগিয়ে নিন। চোখে কাজল, মাশকারা ও লাইনার লাগান, ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা আইশ্যাডো লাগান। ঠোঁটে একটু লিপস্টিক দিন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে টিপ পরুন। এবার দুই গালে হালকা করে ব্লাশন বুলিয়ে দিন। মিলিয়ে জুতা বেছে নিন। হাল্কা কিন্তু পছন্দের পারফিউম বেছে নিন।
পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চুলের সাজ ঠিক করে নিন। ঝটপট তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ুন বিশ্বজয়ের জন্য।
সাধারণে অনন্য-
পুরনো স্টাইল বলে সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরা থেকে বিরত থাকার কোনো কারণ নেই। অফিস কিংবা পার্টিতে এখনো শাড়ির কদর আগের মতোই। সালোয়ার কামিজ পরলে চেষ্টা করুন ওড়নার ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনতে। এর পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে হাইহিল জুড়ে দিলেই ট্রেন্ডি আউটফিটে চমকে দিতে পারবেন সবাইকে। তবে হাইহিলে যারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, তারা সেটিকে এড়িয়ে চলাই ভালো।
অনেকেই আছেন যারা পর্দা করেন। তারা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ির সঙ্গে হিজাব ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে হিজাব বাঁধার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়মগুলো আয়ত্তে থাকলে একেবারে সাধারণের মধ্যেও আপনি হয়ে উঠতে পারবেন অনন্য অসাধারণ।
সামারে কুর্তি ম্যাজিক-
শীতের সময় মেয়েদের করপোরেট লুকে ব্লেজার অপরিহার্য। তেমনি এই সামারে নব্বই শতাংশ মেয়েরা অফিসে জিন্স কুর্তি পরতে পছন্দ করেন। সমীক্ষা বলছে এই পোশাক তাদের দারুণ পছন্দ।
ক্লাসিক লুক-
কর্মজীবী নারীদের জন্য এই লুকের কোনো বিকল্প নেই। অফিসে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এই ক্ল্যাসিক লুক। শার্টের সঙ্গে ট্রাউজার বা শর্ট স্কার্ট পরতে পারেন। ভিন্নতা আনতে শার্টের নকশা ও রঙে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। পোশাকের সঙ্গে সাজটা অবশ্যই মানানসই হওয়া চাই। সেজন্য অফিসে ক্ল্যাসিক লুকের বেলায় কখনোই গাঢ় মেকআপ বা কড়া সাজ দেওয়া উচিত নয়। অনেকেই করপোরেট লুকে কালোর প্রাধান্য দেন। কালো-সাদার কম্বিনেশনটা এক্ষেত্রে স্মার্ট। কিন্তু চাইলেই রঙের ভিন্নতা আনতে পারেন।
ঝটপট স্মার্ট লুকের জন্য-
আপনি কর্মজীবী হোন বা ছাত্রী হোন- সাজগোজের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে সময়। পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে পছন্দের লুক আনা যায় না। কিন্তু ঝটপট স্মার্ট লুকের রয়েছে কিছু কৌশল।
আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন কোথায় কী পরে যাবেন। অফিস বা পার্টি কিংবা ক্যাজুয়াল যাই হোক না কেন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনুষঙ্গগুলো গুছিয়ে রাখুন।
সাজের ব্যাক আপ হিসেবে আপনার সঙ্গে ছোট্ট মেকআপ কিট রাখতে পারেন। সেখানে আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের ফেস পাউডার, কাজল আর লিপস্টিক রেখে দিন। প্রয়োজনে কাজে দেবে।
চটজলদি মেকআপ করার বেশ কিছু কৌশল আছে। চেষ্টা করুন সেগুলো রপ্ত করতে। চোখের সাজ, ঠোঁটের সাজের কৌশলগুলো জানা থাকলে অল্পতেই স্মার্ট লুক আনতে পারবেন।
চুল গোছাতে যাদের অনেক বেশি সময় লেগে যায় তারা দ্রুত হেয়ারস্টাইলের কৌশলগুলো একবার দেখে নিন। ইউটিউবে এসবের ভূরি ভূরি টিউটোরিয়াল আছে। সেখান থেকে কয়েকটি কৌশল যদি আপনার জানা থাকে তাহলে মাত্র ৫ মিনিটেই নিজেকে পাল্টে ফেলতে পারবেন।
কসমেটিকস প্রোডাক্টের সঙ্গেও সাজগোজ আর লুকের বিষয়টি জড়িত। মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হয় এমন পণ্য ব্যবহার করলে সুবিধা হয়। অনেক সময় অল্প স্থায়ী মেকআপ গলে গিয়ে একাকার হয়ে যায়।
স্মার্ট অ্যান্ড সিম্পল-
এক্ষেত্রে সাদামাটা টপ বা সিঙ্গেল কামিজ চড়িয়ে নিতে পারেন। জিন্স-কামিজের কম্বিনেশনটা একদিকে যেমন আরামদায়ক তেমনি স্মার্ট অ্যান্ড লুকে এর জুড়ি নেই। সঙ্গে মানানসই হাল্কা জুয়েলারি থাকতে পারে। আর পায়ে থাকতে পারে স্নিকার্স। এই লুক যেমন বাইরে বেরোনোর জন্য পারফেক্ট তেমনি অফিসেও মানিয়ে যায় সহজেই।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন