উৎসব শেষে ডায়েট

উৎসব শেষে ডায়েট

কোরবানির ঈদ মানেই খাবার টেবিলে নানা পদের মাংস, মিষ্টান্ন আরও কত কি! এত সব মুখরোচক খাবারের মাঝে কি আর হিসাব করে খাওয়া যায়? ওজনের চিন্তা ভুলে ঈদের কয়েকটা দিন তাই নিশ্চয়ই একটু একটু করে সব পদই খেয়েছেন, তাই না? একটু একটু করেও খাওয়া কিন্তু কম হয়নি, ওজনটা ঠিকই বেড়ে গেছে। এবার শুরু করুন ডায়েট। কী থাকবে ডায়েট চার্টে? পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো।

 

সারাবছর আমরা যতই নিয়মের মধ্যে খাওয়াদাওয়া করি না কেন, উৎসব এলেই সব নিয়ম ভুলে যাই। ফলে আমাদের অনেকেরই উৎসবের পর ওজন বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, “ঈদের সময় যা পাই তা-ই খাই এমনটা অভ্যাস যাদের, তাদের শরীরকে ঠিক করে আনতে ঈদের দু-তিন দিন পর থেকেই খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানা উচিত। এ জন্য ঈদের পর কিছুদিন ‘রেড মিট’ খাওয়া একেবারেই বাদ দিন। দুবেলা মাছ ও সবজি খান। মাছে ফ্যাট থাকলেও সেটা রক্তে জমে না। বরং চর্বি কমাতে সাহায্য করে।” ঈদের পর ওজন ঝড়াতে পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো দিয়েছেন আরও বেশ কিছু পরামর্শ।

 

ডায়েট শুরুর আগে-

ডায়েট শুরু করার আগে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। আমরা অনেকেই যেটা করি, মানসিক প্রস্তুতি না নিয়ে ডায়েট শুরু করি। এতে দেখা যায় মানসিক প্রস্তুতি না থাকায় দু-একদিন পর ডায়েট আর চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না। তাই ডায়েট শুরু করার আগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন যে, আপনাকে আগামীকাল থেকেই ডায়েট শুরু করতে হবে, ফিট থাকতে প্রতিদিন নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে।

ডায়েট শুরু করার আগেই কোনটা কম খেতে হবে, কোনটা বেশি খেতে হবে এ বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে-বুঝে ডায়েট শুরু করুন। এতে খাবার দেখলেই মনে পড়ে যাবে সেটা খাওয়া যাবে কিনা।

ওজন কমাতে তেল, লবণ, মিষ্টি, মাংসজাতীয় খাবার খাওয়া কমাতে হবে। আমরা অনেকেই ডায়েটে ভাত একেবারেই বাদ দিয়ে দিই। এতে দ্রুত ওজন কমলেও পরবর্তী সময়ে দু-একদিন একটু বেশি খেলেই আবার ওজন বেড়ে যায়। ভাত খেতে হবে তবে খুব কম পরিমাণে।

 

ডায়েট আহার-

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। অ্যাসিডিটি সমস্যা থাকলে খালি পেটে লেবু-পানি না খেয়ে সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে লেবু-পানি খেতে পারেন। সকাল ৮টার মধ্যেই নাশতা সেরে ফেলুন। নাশতায় রাখতে পারেন অল্প চিড়া, এক কাপ টকদই, একটি কলা, একটি ডিম সিদ্ধ এবং একটিটি আপেল খান। চিড়া খেতে না চাইলে কলা দিয়ে একটা পাতলা রুটি খেতে পারেন। সকালের নাশতার ২ ঘণ্টা পর চিনি ছাড়া বিস্কুট ও চা খান।

 

ফল রাখুন খাদ্যতালিকায়-

  • দুপুরের খাবারের থালায় ভাতের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ এক কাপ। এর সঙ্গে এক পিস মাছ কিংবা এক পিস মুরগির মাংস, সবজি দেড় কাপ, পাতলা ডাল এক কাপ এবং এক কাপ সালাদ দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিন।
  • বিকালে ভাজাপোড়া খাওয়ার অভ্যাস একেবারেই বাদ দিন। বিকালে খাদ্যতালিকায় রাখুন বিভিন্ন রকম ফল কিংবা শসা, টমেটোর তৈরি মিক্সড সালাদ। সালাদে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরে ক্যালরির পরিমাণ কমায়।
  • রাতের খাবার শেষ করুন সন্ধ্যা ৭-৮টার মধ্যে। রাতের খাবারে এক পিস মাছ, এক কাপ সবজি, পাতলা ডাল এক কাপ, দেড় কাপ সালাদ ও ফল খেতে চেষ্টা করুন। ওজন বেশি বেড়ে গেলে এ বেলায় ভাত বাদ দিন। ওজন খুব বেশি না বাড়লে রাতে এক কাপ ভাত খেতে পারেন।
  • রাত ১০টায় দুটি খেজুর ও সর ছাড়া এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিন।

 

জেনে রাখুন-

  • তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, বিরিয়ানি, পোলাও, ফাস্টফুড, কলিজা, মগজ, সফট ড্রিংকস, ডিমের কুসুম প্রভৃতি খাবারে ওজন বাড়ে। ফিট থাকতে এ ধরনের খাবার বর্জন করুন।
  • ডায়েটে সবজি ও ফল খাওয়া সাধারণত মানা নেই। তবে কিছু কিছু সবজি ও ফল রয়েছে, যেগুলোয় ওজন কিছুটা বাড়ে, যেমনÑ কচুরমুখি, কাঁচকলা, আলু, পাকা কলা। এসব খাবার কম খেতে চেষ্টা করুন।
  • কিছু খাবার যেমন ওজন বাড়ায়, ঠিক তেমনি কিছুু খাবার ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিন টি, অলিভ অয়েল, সবুজ আপেল, লাল আটা, শসা, কাঁচা পেঁপে, লেবু, জাম্বুরা প্রভৃতি। খাদ্যতালিকায় নিয়মিত এ ধরনের খাবার রাখুন।

 

কিছু বিষয় মেনে চলুন-

  • ঈদের পর কাজের ব্যস্ততা কম থাকে বলে অনেকেই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। চেষ্টা করুন বছরের বাকি সময়টার মতোই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে।
  • খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন।
  • তিন বেলা নয়, ডায়েট খাবার খেতে হবে পাঁচ থেকে ছয় বেলা। অর্থাৎ একটু একটু করে বারবার খাবার খান।

 

করতে হবে শরীরচর্চাও-

ওজন কমাতে এবং ফিট থাকতে ডায়েটের পাশাপাশি শরীরচর্চাও করতে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে। সেই সঙ্গে ১৫-২০ মিনিট ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করুন। চাইলে ইয়োগা, অ্যারোবিকস, সাঁতার, সাইক্লিংও করতে পারেন। এগুলোও ভালো ব্যায়াম।

 

 

সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়

ছবিঃ সংগৃহীত