প্রেগন্যান্সি সময়ের জন্য পরামর্শ

প্রেগন্যান্সি সময়ের জন্য পরামর্শ

একটি সন্তান জন্মদানের মধ্য দিয়ে জন্ম হয় একজন মায়েরও। মাতৃত্ব একজন নারীর দৈহিক পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক উদাহরণও বটে। তাই সুস্থ নবজাতক ও মায়ের সুস্থতা নিশ্চিতে দরকার গর্ভাবস্থার প্রথম দিন থেকে সঠিক যত্ন । প্রেগন্যান্সি সময়ে মায়ের পূর্ণাঙ্গ যত্ন আত্মি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. নওশীন শারমিন পূরবী।

গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই প্রথম থেকেই রয়েছে বেশ কিছু করণীয়। প্রথম তিন মাসের ভিতর যদি বোঝা যায় আপনি সন্তানসম্ভবা তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এ সময় অনেকের বমির ভাব হয়, বমিও হয়। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ সময় অনেকের খাবারে অরুচি হয় বা নতুন কোনো খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তাই ব্যালান্সড ডায়েট খুবই জরুরি। প্রেগন্যান্সিতে শরীরে ক্যালসিয়াম ও আয়রন প্রয়োজন। এ জন্য সবুজ শাক-সবজি, লাল ছোলা, কাঁচকলা, পালংশাক, শুকনো ফল, ছোট মাছ যেন অবশ্যই খাদ্যতালিকায় থাকে। ক্যালসিয়ামের জন্য দুগ্ধজাত খাবার যেমন- দুধ, দই, ছানা, পনির খেতে পারেন। ফ্যাটি ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। রান্নার সময় তেল ও ঘিয়ের পরিমাণ কম রাখুন। কারণ এগুলো রক্তচাপ বাড়িয়ে ভ্রণের ক্ষতি করতে পারে।

 

তিন থেকে পাঁচ মাস-

এরপর তিন থেকে পাঁচ মাসের গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খারাপ লাগা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। এ সময় আরামদায়ক ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করুন। যতটা সম্ভব হালকা-পাতলা সুতির পোশাক পরা উচিত। নখ কেটে ফাইল ঘষে নমনীয় রাখতে হবে, যাতে করে ত্বকে সামান্য আঁচড় বা আঘাত না লাগে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মমতো গোসল করতেই হবে। তবে বেশি তেল, সাবান বা কসমেটিকস ব্যবহার না করাই ভালো। আর পার্লার গেলে হেভি কেমিক্যাল দেওয়া বিউটি ট্রিটমেন্ট করাবেন না। আর এ সময় চুল কালার বা ডাই করা বন্ধ রাখুন।

 

পাঁচ থেকে সাত মাস-

মজার ব্যাপার হলো, এ সময় আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বাচ্চা পেটের মধ্যে নড়াচড়া করছে। এরপর পাঁচ থেকে সাত মাসে পেট দ্রুত বাড়তে থাকবে এবং বাহ্যত দৃশ্যমান হবে আপনি গর্ভবতী। আগের চেয়ে ক্ষুধা বেড়ে যাবে। এ সময় সুষম খাবার  খেতে হবে। সহজে হজম হয় এমন খাবার খাবেন। বেশি তেল চর্বিযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া পরিহার করুন।

 

সাত থেকে আট মাস-

সাত থেকে আট মাস গর্ভাবস্থায় ভাবতে শুরু করুন আপনার বাচ্চার জন্য আপনি কী কী করতে চান। একই রক্তের গ্র“পসম্পন্ন বন্ধু বা আত্মীয় ঠিক রাখুন যিনি প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারবেন। এ ছাড়া হাঁটাহাঁটি সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম।

 

আট থেকে নয় মাস-

আট থেকে নয় মাস সময়ে প্রয়োজনীয় টেলিফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। তলপেট শক্ত হয়ে আসা, কোমরের ব্যথা সামনে তলপেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া, বার বার ব্যথা ওঠা, পানি ভাঙা, রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব বের হওয়া প্রসব বেদনার লক্ষণ। তাই গর্ভকালীন সময়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

 

প্রেগন্যান্ট মায়েদের জন্য অবশ্য পালনীয় কিছু বিষয়ঃ

  • ডাক্তারের সঙ্গে সবসময় সাক্ষাৎ রাখুন।
  • গর্ভবতী মায়েদের সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
  • খাবারে অরুচি থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
  • এ সময় অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দেওয়া খাবার এবং ফুড হাইজিনের বিষয়ে সতর্ক হোন।
  • হবু মায়েদের নিয়মিত ব্যায়াম করাটা অনেক উপকারী।
  • ক্ষতিকর কোনো অভ্যাস থাকলে অবশ্যই ত্যাগ করুন।
  • এ সময় চা, কফি অর্থাৎ ক্যাফেইন গ্রহণ কমাতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

 

কখন ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজনঃ

  • যে কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব করলে
  • হঠাৎ খিঁচুনি উঠলে।
  • রক্তপাত হলে বা তরল নিঃসৃত হলে।
  • মাথা ঘোরালে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে।
  • শ্বাসকষ্ট হলে।
  • হৃদস্পন্দন বেশি হলে বা বুক ধড়ফড় করলে।
  • ঘন ঘন বমি বমি ভাব থাকলে বা বমি হলে।
  • হাঁটতে অসুবিধা হলে।
  • হাড়ের জয়েন্ট ফুলে গেলে।
  • শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে।

 

গর্ভবতীর ত্বকচর্চা-

এ সময়ে দেখা দেয় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন। যার প্রভাব ত্বকেই বেশি দেখা যায়। তাই গর্ভবতী ও প্রসূতি মা’দের ত্বকের সমস্যা সমাধানে সচেতন হতে হবে। গর্ভবস্থায় প্রায় নব্বই শতাংশ নারীর দেখা যায় এই অনাকাক্সিক্ষত ফাটা দাগ। মা ও সন্তানের ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে ত্বক টান টান হতে থাকে আর ড্যামেজ হয়  কোলাজেন, ইলাস্টিন। তাই যারা প্ল্যান করছেন প্রেগন্যান্সির শুরুতে স্কিন কেয়ার রেজিম এ লিপিড রেপ্লিনিশিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

 

ত্বকের পিগমেন্টেশান-

এ সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ত্বকে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের পিগমেন্টরি ডিজঅর্ডার। হঠাৎ করে মুখে, গলায় কালো বা বাদামি যে ছোপ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আরবুটিন ল্যাকটিক অ্যাসিড যুক্ত স্কিন লাইটেনিং ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডার্মাটোলজিস্টরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে মেছতা ২/৩ মাস পর চলে যায়।

 

ব্রণ ও র‌্যাশ-

প্রেগন্যান্সিতে ত্বকের অয়েল গ্লান্ডগুলো হাইপার অ্যাক্টিভিটির জন্য মুখে, ঘাড়ে, হাতে ব্রণ হয়। এ সময়টিতে সেবাম রেগুলেটর ক্লিঞ্জার ও ওয়াটার বেজড অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার মুখের জন্য ব্যবহার করলে এ সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। জিংক সালফারযুক্ত লোশন বা ইমালশনই যথেষ্ট ব্রণের চিকিৎসায়।

 

চুলের পরিবর্তন-

চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়া এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন প্রেগন্যান্ট এবং ল্যাকটেটিং মা’রা। খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি, নিজের প্রতি উদাসীনতা এসব কিছু চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই আয়রন ও ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেতে হবে।

এ সময় মা’দের নিজের প্রতি সচেতন হতে হবে। অনেকেই জানেন না প্রেগন্যান্সিতে শরীরের যে পরিবর্তন হয় তাকে টোটাল বডি রিজেনারেশন বলা হয়। তাই এ সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, অ্যান্টিন্যাটাল চেকআপ, মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম ও স্কিন কেয়ারের মাধ্যমে মা থাকবে সুস্থ ও ভূমিষ্ঠ হবে সুস্থ শিশু।

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন

ছবিঃ সংগৃহীত