ফ্যাশনে লেইসের ব্যবহার
লেইস মূলত নেটের একটি ফ্যাশনেবল রূপ। এদের মধ্যকার মূল পার্থক্য হলো নেটের বুননে নকশার কোনো বিশেষ প্যাটার্ন ফলো করা হয় না। কিন্তু লেইসে নকশার বিশেষ প্যাটার্ন থাকে। মশারি আর গৃহসজ্জার নেটের সঙ্গে পোশাকের নেট ফ্যাব্রিকসের পার্থক্য হলো সুতার মান আর বুননে। পোশাকের জন্য নেট ফ্যাব্রিকস তৈরি হয় সিল্ক সুতার বুননে। আর মশারি কিংবা ডেকোরেশনে ব্যবহার করা হয় সিনথেটিক সুতার নেট ফ্যাব্রিকস। তাই পোশাক কেনার আগে সিল্কের নেট ফ্যাব্রিকস দেখে নেওয়া উচিত। কারণ সিনথেটিক নেট ত্বকের নানাবিধ সমস্যা তৈরি করতে পারে। ভালো ফ্যাব্রিকস চিনব কিভাবে—জানতে চেয়েছিলাম চাঁদনি চকের গজ কাপড় বিক্রেতা মো. আরিফ হোসেনের কাছে। জানালেন, ‘নেটের কিছু অংশ আগুনে পুড়িয়ে দেখতে হবে। যদি সেটি ছাই না হয়ে গলে যায়, তবে তা নকল।’
বাজারি হালচাল-
বাজার ঘুরে দেখা গেল, পোশাকে লেইসের ব্যবহারে এসেছে ভিন্নতা। শাড়ির আঁচল, কুঁচি, পাঁড় আর জমিনে এসেছে বৈচিত্র্য। পুরো শাড়িতে লেইস ফ্যাব্রিকস ব্যবহারের বদলে ফিউশন ডিজাইনের দিকে ঝুঁকছেন ডিজাইনাররা। কখনো পাড়ে যুক্ত হয়েছে এমব্রয়ডারি করা আলাদা লেইস। কুঁচিতে আবার জর্জেট বা মসলিন ফ্যাব্রিকস, আঁচলে টারসেল বা ঝালর যোগ হচ্ছে। কখনো আবার ডাই করে শাড়িকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে নিয়ে তারপর তাতে লেস, স্টোন ও সিকোয়েন্স নকশা করা হচ্ছে। শাড়ি ছাড়া ফ্যাশনেবল সালোয়ার-কামিজ, গাউন, টপস, স্কার্টেও লেইস ফ্যাব্রিকসের দেখা মিলছে বাজারে। লেইসের সঙ্গে সিল্ক ফ্যাব্রিকসের ফিউশন নকশা চোখে পড়ে বেশি। অন্যান্য ফ্যাব্রিকসও থাকছে কমবেশি। জর্জেট কিংবা কাতান ফ্যাব্রিকসও থাকছে ফিউশন নকশায়। এসবের বেশির ভাগই পার্টি পোশাক।
ডিজাইন আর নকশা-
এমব্রয়ডারি, প্যাঁচওয়ার্ক, কারচুপি, জারদৌসিসহ বিভিন্ন নকশামাধ্যমে ডিজাইন হচ্ছে লেইসের জমকালো পোশাকে। হ্যান্ডপেইন্ট বা হাতের কাজের নকশাদার ফ্যাব্রিকস, লেইস বা ইয়োক ব্যবহার হচ্ছে পোশাকের নকশায় বৈচিত্র্য আনতে। লেইসের পার্টি পোশাকে পুঁতি বা মুক্তার নকশার মিশেলে ফুটে উঠছে গর্জিয়াস লুক। জর্জেট, সিল্ক বা লিনেনের মতো ফ্যাব্রিকসে শুধু লেইসের নকশায়ই জমকালো হয়ে উঠছে পোশাক। কখনো আবার লেইসের ওপর অ্যাপ্লিক করে বসানো হচ্ছে মসলিন, টিস্যু, কাতান, অ্যান্টিক লেস ও বিভিন্ন ধরনের সিকোয়েন্সের কাজ। পোশাকের কাটিং প্যাটার্নে দেখা মিলছে চলতি হাওয়ার। টপস, কুর্তা, গাউনের ডিজাইনে থাকছে বাহারি লেইসের ফ্রিল বা ফ্লেয়ার নকশা। তানজিল ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার তানজিল জনি বললেন, ‘পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকে লেইসের ব্যবহার হয় বেশি। এখন এর ফ্যাব্রিকসেও বৈচিত্র্য এসেছে। সাধারণ লেইস ফ্যাব্রিকসের পাশাপাশি শিমার লেইস রাতের পার্টি পোশাকের জন্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এতে যেকোনো রং উজ্জ্বল ও চকচকে দেখায়। এ ছাড়া মিহি বা পাতলা লেইস ব্যবহার হচ্ছে সিকোয়েন্স লেইসের ডিজাইনে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ছাড়াও লেইসের লেহেঙ্গা, গাউন ডিজাইন করেছি।’
রঙের খেলা-
ডিজাইনার শারমিন মোস্তাফি কনি বললেন, ‘লেইসের বিশেষত্ব হলো—যেকোনো রংই এই ফ্যাব্রিকসে বেশ উজ্জ্বল দেখায়। যেহেতু আলাদা করে ইনার বা লেয়ার দেওয়া হয়, তাই রং নিয়ে নিরীক্ষারও অনেক সুযোগ পাওয়া যায়। ওয়ান টোন বা সিঙ্গল টোনের পাশাপাশি এখন মাল্টিটোনের লেইস জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দু-তিন রঙের লেইস একসঙ্গে জোড়া লাগিয়েও হচ্ছে নকশা। আসছে শীত মৌসুম। শীত উত্সবের ঋতু। বিভিন্ন ধরনের উত্সব-অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। এসব উত্সবের উজ্জ্বল ও গাঢ় রংগুলো নেটে মনমতো মিলে যায় বলেই শীতে লেইসের আলাদা কদর থাকে। ফ্রান্সের লেইস ফ্যাব্রিক সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত। এ ছাড়া দুবাই বা সৌদি আরবের লেইস ফ্যাব্রিকের গুণ-মানও ভালো।’
লেইসের শাড়িতে যুক্ত হচ্ছে নানা অনুষঙ্গ। মসলিন, সিল্কসহ নানা ফ্যাব্রিকের সঙ্গে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে আঁচলে ঝালর। ব্লাউজের ডিজাইন ও কাটেও লেইসের ব্যবহার হচ্ছে নানাভাবে
কুর্তি, টপস বা কামিজ- লেইসের জনপ্রিয়তা সবখানেই। কখনো পুরো পোশাক, আবার কখনো বা পোশাকের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে লেইস
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ