পোশাকে নতুনত্ব থাকবে নকশায়
ঈদে সারাদিনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সালোয়ার-কামিজের কোনো জুড়ি নেই। তবে সেটি হওয়া চাই হাল ফ্যাশনের। ঈদে কামিজের কাটছাঁটে দেখা যাবে বৈচিত্র্য, নতুনত্ব থাকবে নকশায়ও। বাজার ঘুরে ঈদের সালোয়ার-কামিজ নিয়ে লিখেছেন-কেয়া আমান
রোজার ঈদ আর কোরবানির ঈদের মধ্যে সময় ব্যবধান খুব বেশি না হলেও আনন্দটা সীমাহীন। তাই সবাই চায় এই ঈদেও বর্ণিল পোশাকে নিজেকে সাজাতে। ঈদের পোশাকে নতুনত্ব আর নজরকাড়া নকশার প্রতি আগ্রহ থাকে সবার। ডিজাইনাররাও চেষ্টা করেছেন ক্রেতাদের এই আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে ঈদের পোশাক তৈরি করতে।
কেমন হয়েছে এই ঈদের সালোয়ার-কামিজের কাটছাঁট জানালেন বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। তিনি বলেন, ‘গত ঈদের মতো সালোয়ার-কামিজের প্যাটার্ন এবং আরামের বিষয়টিতে এবারও আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পোশাকের কাটিং, লেয়ার, প্লিট, কুচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। লেয়ারের ক্ষেত্রে গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি কাপড়ের সঙ্গে জর্জেট কিংবা পাতলা বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্সের লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে।’
কামিজের কাটছাঁটে প্রতিবছরই চলে নিরীক্ষা। নানা বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নতুনত্ব দেখা যাবে নকশায়ও। পেছনে লম্বা রেখে সামনে খানিকটা খাটো ঝুল, দুই কোনায় বেশি ঝুল, ওভাল আকৃতি ইত্যাদি প্যাটার্নে তৈরি কামিজগুলো তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সালোয়ার-কামিজের ডিজাইন আর কাটিংয়ের ফিউশন থাকবে এবারও আলোচনায়। নকশায় নতুনত্ব চোখে পড়বে নেক লাইন, হাতা এবং বটম অংশে। অলঙ্করণে এই ঈদেও প্রাধান্য পাবে ফুল এবং জ্যামিতিক নকশা। সালোয়ার-কামিজের হাতায় এই ঈদে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য লক্ষ করা যাবে ফ্রিলের ব্যবহারে বলে জানালেন বিবিআনার ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার।
তিনি বলেন, ‘ফ্রিলের ব্যবহার এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, যা দেখা যাবে ঈদের পোশাকেও। কখনো হাতার মাঝখান বা কনুইয়ের ওপর থেকে ফ্রিল দেওয়া হয়েছে, তো কখনো হাতার অর্ধেকটা সোজা হয়ে বাকি অংশে যোগ করা হয়েছে ফ্রিল। পুরো হাতায় ফ্রিলও দেখা যাবে, যা কব্জির কাছে এসে কিছুটা কুচি দিয়ে শেষ হয়ে যায়। ফ্রিলে জর্জেট, মসলিনের খুব পাতলা কাপড় ব্যবহার করেও নতুনত্ব আনা হয়েছে। এ ছাড়া ভারী কাজের লং-কামিজের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে কোটি-কামিজ। উৎসবের বিষয়টি মাথায় রেখে সালোয়ার-কামিজে গর্জিয়াস লুক দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
পোশাকের হাতায় এই ঈদে বৈচিত্র্য চোখে পড়বে। অধিকাংশ হাতা ঢিলা এবং ছড়ানো স্টাইলে করা হয়েছে।
দুটি ঈদ খুব কাছাকাছি হওয়ায় পোশাকে এই ঈদে খুব বড়সড় পরিবর্তন না করে কিছু সংযোজন করা হয়েছে বলে জানালেন রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার সৌমিক দাস। তিনি বলেন, ‘খুব বড়সড় কোনো পরিবর্তন নয়, ছোট ছোট পরিবর্তন, কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে নতুনত্ব আনা হয়েছে কোরবানির ঈদের পোশাকে। যেমন পোশাকে মোটিফ বা প্যাটার্ন পুরাটাই বদলে ফেলিনি। বরং আগের ঈদের মোটিফ ও প্যাটার্নে কিছু নকশা যোগ হয়েছে; প্লিট ও লেয়ারের কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছেÑ যা সালোয়ার-কামিজের নতুন লুক দিয়েছে।’
হাতায় টিউলিপ, কেপ, রুমাল ছাঁট, বেল স্লিভ, ট্রাম্পেট, প্রিন্সেস, হুররাম হাতা, ভেলবেটন হাতা ছাড়াও নানা নকশার কোল্ড শোল্ডার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কোল্ড শোল্ডারে হাতার মাঝ বরাবর কিংবা কাঁধ থেকে মাঝ বরাবর লম্বা, ত্রিভুজ, গোলাকার, পানপাতা স্টাইলে ফাড়া নকশা করা হয়েছে। গলার ডিজাইনে আশির দশকের গলার হল্টার ডিজাইন আবার ফিরে এসেছে। তা ছাড়া হাই নেক কলার, শেরওয়ানি কলার, বোটগলা, গলার ডিজাইন বৃষ্টিবাদলার ঈদেও জায়গা দখল করে নিয়েছে। সালোয়ারের লেন্থে এবারও অনেক বেশি পরিবর্তন চোখে পড়বে। এ ক্ষেত্রে বেলবটম, স্ট্রেট কাটের প্যান্ট, পালাজ্জো ও সিগারেট কাটের আধিক্য দেখা যাবে।
কে-ক্র্যাফটের ডিজাইনার ও সিইও শাহনাজ খান জানান, ‘ঈদের পোশাক জমকালো এবং আরামদায়ক করতে পোশাকের ভ্যালু অ্যাড নয়, প্যাটার্নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্যাটার্ন জমকালো করতে এ বছর কোটি-বেজড সালোয়ার-কামিজ বেশি চলবে। এ ছাড়া লেয়ার কামিজ এবার ঈদের ট্রেন্ড হিসেবেও থাকবে। ঝুল পছন্দের তালিকায় রয়েছে লং এবং সেমি লং।’ কামিজের মধ্যে এই ঈদে মিডি কামিজ এবং ফ্রক স্টাইলে কামিজ ফ্যাশনে আবারও ইন করেছে।
বর্ষায় ঈদ হওয়ায় সবুজ, ধূসর, কমলা, ফিরোজা, নীল, আকাশি, মেরুন, বেগুনিসহ প্রকৃতিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রঙগুলোই তুলে আনা হয়েছে ঈদের পোশাকে। সম্পূর্ণ কামিজে সুতির পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলছে লিলেন, হাফসিল্ক, ধুপিয়ান, বলাকা সিল্ক, জ্যাকার্ড প্রভৃতি।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, বসুন্ধরা সিটি, নাভানা টাওয়ারে জর্জেট, অ্যান্ডি, সিল্ক কাপড়ে জারদৌসি, কারচুপি, এমব্রয়ডারি কাজের জমকালো কুর্তি, কামিজের সংগ্রহ বেশি। ইস্টার্ন মল্লিক, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ ও বিভিন্ন ধরনের সিকোয়েন্স ব্যবহারে ইন্ডিয়ান কটন সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাবে। মার্কেটগুলোয় পালাজ্জোর নানারকম আকৃতি পাওয়া যাবে। কোনোটা প্যান্টের মতো সমান্তরাল, তো কোনটা স্কার্টের মতো ছড়ানো, আবার কোনোটা চাপা প্যান্টের মতো সমান।
বিভিন্ন মার্কেট থেকে শপিংমল সবখানেই পাওয়া যাবে সালোয়ার-কামিজ। তবে একটু ভিন্নতা চাইলে যেতে পারেন বিশ্ব রঙ, বিবিআনা, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, নিপুণ, মায়াসির, কে-ক্র্যাফটসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে।
সূত্রঃ দৈনিক অামাদের সময়
ছবিঃ দৈনিক আমাদের সময়