ফুলের ভেষজ গুণ
আয়ুর্বেদ এবং ইউনানী চিকিত্সাশাস্ত্রের শুরু থেকেই রোগ নিরাময়ের জন্য ফুলের ব্যবহার হয়ে আসছে। জনপ্রিয় কিছু ফুলের ভেষজ গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন আয়ুর্বেদ চিকিত্সক ফজলে মবিন তালুকদার।
গোলাপ-
বমি বমি ভাব দূর করতে ও ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করে গোলাপ। মাথাব্যথা, চক্ষুরোগ ও অতিরিক্ত ঘামের সমস্যায় কার্যকর। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। আরো আছে ভিটামিন ‘সি’।
গোলাপ পাপড়ি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ব্লেন্ড করে পান করুন। এটি মস্তিষ্কের দুর্বলতা, দৃষ্টিক্ষীণতা, হূত্কম্প, উদরাময়, আমাশয়, ডাইরিয়াসহ পেটের বিভিন্ন সমস্যায় কার্যকর।
গাঁদা-
ব্রণ, র্যাশ, খোসপাঁচড়াসহ ত্বকের যেকোনো সমস্যায় গাঁদা ফুল উপকারী। এ জন্য ১ লিটার পানিতে এক মুঠো গাঁদা ফুলের পাপড়ি দিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। পানি অর্ধেক হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন। দিনে দুবেলা এই পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি গাঁদা ফুলের পাপড়ি বেটে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিতে হবে দিনে দুবার। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই ত্বকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
জবা-
জবা ফুলের পাপড়ি পেস্ট করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে জ্বর, কাশি ও বমি সেরে যাবে। জবা ফুল শরীর শীতল রাখে। কুসুম গরম পানিতে জবা ফুল ভিজিয়ে রাখুন ২ ঘণ্টা। তারপর সেই পানি পান করুন। মূত্রস্বল্পতা, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে। অল্প ঘি মিশিয়ে জবা ফুলের পাপড়ি নিয়মিত খেলে অধিক রজঃস্রাবে উপকার মিলবে।
পলাশ-
পলাশের ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে গুঁড়া করে কুসুম পানিতে গুলে ছেঁকে নিতে হবে। ১ কাপ পানির সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে খেতে হবে। যেকোনো রকম মূত্রজনিত অসুখে এই ওষুধ ফলদায়ী।
কাঞ্চন-
রক্ত কাঞ্চন ফুল পেট পরিষ্কার করে। তাজা ফুল চিনির সঙ্গে বেটে খেতে হবে। শুকনো ফুলের কুড়ি অর্শ্ব রোগে উপকারী। এ জন্য শুকনো কাঞ্চন কুঁড়ি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করতে হবে।
শিউলি-
শিউলি বা শেফালির রস জ্বর সারায়। তিন চামচ করে তিনবেলা খেলে জ্বর সেরে যাবে।
চাঁপা-
হজমে গোলমাল থেকে বমি বমি ভাব বা বমি হলে দুটি চাপা ফুল হাত দিয়ে চটকে মধু ও পানি মিশিয়ে পান করলে বমি ভাব কেটে যাবে। দুটি চাপা ফুল বেটে আধা কাপ পানিতে গুলে পান করলে পেট ফাঁপা কমে যাবে।
বকফুল-
বক ফুলের রস এক চা চামচ করে দিনে তিনবার খাওয়ালে সর্দি সেরে যাবে। এটা শরীর ব্যথা ও বসন্ত রোগে কার্যকর। শুষ্ক কাশিতেও বকফুলের রস উপকারী।
বকুল ফুল-
মাথাব্যথা, জ্বর ও অকালে দাঁত পড়া সমস্যায় উপকারী। বকুল ফুল পানিতে ভিজিয়ে চটকে সেই পানি পান করা যায়। আথবা ফুল শুকিয়ে গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়েও খাওয়া যায়। বকুল ফুলের পানি মাথা ঠাণ্ডা রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মহুয়া-
মহুয়া ফুলের নির্যাস উত্তেজক এবং আদিবাসীদের প্রিয় পানীয়। এ ফুল অনেক দিন শুকিয়ে রাখা সম্ভব। মিষ্টান্ন, পুডিং ও অন্যান্য খাদ্যেও এই ফুলের ব্যবহার করা যায়।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত