পুরুষের পোশাকের জন্য ১০টি দেশী  ব্র্যান্ড

পুরুষের পোশাকের জন্য ১০টি দেশী ব্র্যান্ড

শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের ধরনভেদেও প্রয়োজন হয় ফরমাল পোশাকের। কার্যক্ষেত্রে ভাব-গাম্ভীর্যের অনেকাংশই নিজেদের পরিধানে বজায় রাখার চেষ্টা করেন পুরুষেরা।

যার কারনে, নিয়মিতই তাদের দেখা যায় স্যুট বা অন্যান্য ফরমাল পোশাকে হাজির হতে। রেডিমেড বা টেইলারিং যেমনি হোক না কেন, এমন পোশাক শিল্পের গ্রাহক শ্রেণি নেহায়েত কম নয়। তাদের জন্যই দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে শত শত দেশী প্রতিষ্ঠান। চলুন, এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় দেশী ব্র্যান্ডগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ফেরদৌস টেইলার্স ফেব্রিক্স -

ফেরদৌস টেইলার্স ফেব্রিক্স ফ্যাশন শুরু হয় ১৯৮০ সালে।

ঢাকার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ লোকেশনগুলোতে রয়েছে এদের উপস্থিতি। তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ কাপড়, সেলাইয়ের প্যাটার্ন এবং দামের কারণে তারা বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোকদের কাছে পরিচিত। শার্ট, স্যুট, ও প্রম স্যুট এদের সেরা তালিকার অন্তর্ভুক্ত। 

স্টার টেইলার্স-

১৯৬৫ সাল থেকে মামুলি এক দর্জি দোকান থেকে যাত্রা শুরু করে স্টার টেইলার্স। পুরুষদের কাস্টম-মেড পোশাকের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠান এই স্টার টেইলার্স প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম দিকে তারা মূলত স্যুট তৈরির কাজ করতো। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে সূক্ষ্ম কারুকাজসহ স্যুট বানানোতে দেশব্যাপী দুর্দান্ত খ্যাতি ধরে রেখেছিল স্টার। একই সঙ্গে তারা দেশের সর্বোত্তম কাপড় তৈরিকারকও ছিল।

এখন স্টার আর সেই দর্জি দোকানটি নেই। বিশাল স্টার টেইলার্সের বর্তমান অবস্থান পুরান ঢাকার আরমানিটোলায়।

ক্যাটস আই-

 ১৯৮০ সালে গ্রিন সুপার মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে শুরু হয়েছিল। সেখানে ক্যান্ডি থেকে শুরু করে অলঙ্কার পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই বিক্রি করা হতো। দোকানের একটি ছোট অংশ শার্টের জন্য রাখা হয়েছিল।

পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে অবশ্য তারা পুরুষদের ক্যাজুয়াল পণ্যগুলোর সংগ্রহ নিয়ে চালু হয় মনসুন রেইন। ১৯৯৮ সালে এই গ্রাহক শ্রেণিটিকে আরও সংকীর্ণ করে আবির্ভাব হয় ক্যাটস আই আনলিমিটেডের।

সাধারণ ক্যাটস আই সংগ্রহ বলতে ফরমাল সাদা ও নীল রঙের শার্ট এবং ফরমাল প্যান্টগুলোকেই বোঝানো হয়। এছাড়া তাদের শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি এবং ম্যান্ডারিন ভেস্টগুলো তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

সানমুন টেইলার্স-

১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সানমুন টেইলার্স প্রাইভেট লিমিটেড। শার্ট এবং ট্রাউজার ছাড়াও যে জায়গাগুলোতে তারা সুনাম অর্জন করেছে স্যুট, প্রিন্স কোট, শেরওয়ানি, ওভারকোট, এবং মুজিব কোটে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ সানমুন টেইলার্সের শাখা রয়েছে মোট ১১টি।

আইডিয়াল টেইলার্স-

১৯৮৯ সালে কার্যক্রম ‍শুরু করা আইডিয়াল টেইলার্স প্রাইভেট লিমিটেড, পুরুষদের কাস্টম-টেইলার পোশাক শিল্পে বেশ পরিচিত নাম । উচ্চমানের কাপড়ের অফার থেকে শুরু করে তারা বিক্রি পরবর্তী সেবাও দিয়ে থাকে। 

এছাড়াও স্যুট এবং শার্ট তৈরির যাবতীয় পদক্ষেপগুলোতে স্টাইল সংক্রান্ত তাদের পরামর্শ গ্রাহকের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে। তাদের সেরা কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে বেসপোক স্যুট, টপকোট এবং শার্ট। এদের দুটি শাখা একটি রমনায়, আরেকটি উত্তরায়।

 

men-formal-dress-suit-prince coat-overcoat-পুরুষ-ফরমাল-পোশাক-স্যুট-প্রিন্স কোট-ওভারকোট

ফিট এলিগেন্স-

বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ফিট এলিগেন্স-এর জন্ম ২০০১ সালে। স্যুট, ব্লেজার এবং ট্রাউজারের চাহিদা পূরণে নিবেদিত এই প্রতিষ্ঠান মূলত ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের একটি সহযোগী উদ্যোগ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত এক্সিকিউটিভ পোশাক খাতের অন্যতম পথপ্রদর্শক ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ১৯৮৫ সাল থেকে স্যুট তৈরি করে আসছে।

তাদের বিশেষ সংগ্রহ তালিকায় রয়েছে প্রিন্স কোট, ওয়েইস্ট কোট, ব্লেজার, মুজিব কোট, ট্রাউজার, ওভারকোট, শেরওয়ানি এবং সাফারি।

ফিট এলিগেন্সের বর্তমানে ঢাকায় নয়টি এবং চট্টগ্রামে একটি এক্সক্লুসিভ স্টোর রয়েছে।

রিচম্যান-

দেশের সমসাময়িক ফ্যাশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিচম্যানের শুরুটা হয়েছিল ২০০৩ সালে।

বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে শুরু হওয়া প্রথম রিচম্যানে পুরুষের ফরমাল ও ক্যাজুয়াল দুই ধরনের পোশাক তোলা হয়েছিল। কিন্তু নকশা অনবদ্য হওয়ায় দ্রুতই সেগুলোর আলাদা অবস্থান তৈরি হয়ে যায় বাজারের অন্যান্য পোশাকগুলো থেকে। তরুণদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ইতিবাচক সাড়াগুলোর ওপর ভিত্তি করে একের পর এক চালু হতে থাকে তাদের আউটলেটগুলো। এখানে সাধারণ ফরমাল শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে রয়েছে জুতা এবং পুরুষের ব্যবহৃত প্রসাধনী।

বর্তমানে রিচম্যানের ঢাকার বাইরে চট্টগাম ও সিলেটে শাখা রয়েছে।

বেলমন্ট ফেব্রিক্স-

দেশে স্যুট ও ব্লেজারসহ ফরমাল প্যান্ট ও শার্টের টেইলারিং সেবা নিয়ে বেলমন্ট ফেব্রিক্স প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০০৭ সালে।

শরীয়তপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মিলে বেলমন্টের মোট ১৯টি আউটলেট রয়েছে।

টপ টেন ফেব্রিকস অ্যান্ড টেইলার্স-

বর্তমান সময়ে টেইলারিং জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম টপ টেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনাম এবং দক্ষতার সঙ্গে কাপড়, কাস্টমাইজড টেইলার্স এবং ফ্যাশন শিল্পে ব্যবসা করে আসছে টপ টেন গ্রুপ।

শুরুটা খুব ছোট্ট পরিসরে হলেও টপ টেন ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেড এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকড়া এবং বৃহত্তম কাস্টম-মেড টেইলারিং ব্র্যান্ডগুলোর একটি। তাদের নিজস্ব কাস্টম-মেড পোশাক ছাড়াও রয়েছে, তাদের কালেকশনে আছে বিশ্ব মানের রেমন্ড, অরবিন্দ, রিড অ্যান্ড টেইলর, ডোনার, লিনেন ক্লাব, সোকটাস, সেঞ্চুরি, ওসিএম, এবং মোরারজি।

ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, ময়মনসিংহ মিলে ব্র্যান্ডটির মোট আউটলেট সংখ্যা ২৫। এর মধ্যে ঢাকাতে টপ টেন এর ১৭টি শাখা রয়েছে।

 

men-formal-dress-suit-prince coat-overcoat-পুরুষ-ফরমাল-পোশাক-স্যুট-প্রিন্স কোট-ওভারকোট

 

ড্যাপার বেসপোক-

সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষদের সবচেয়ে অভিজাত ফরমাল পোশাক তৈরিকারকগুলোর একটি হচ্ছে ড্যাপার বেসপোক, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৪ সালে। 

বেসপোক স্যুট ছাড়াও তাদের বিশেষত্ব রয়েছে শার্ট, ব্লেজার, শেরওয়ানি, এবং ট্রাউজারেও।  ড্যাপার বেসপোকের একমাত্র শাখা ঢাকার বনানীতে।

 

পুরুষদের ফরমাল পোশাক ও স্যুট বানানোর এই দেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ফিট এলিগেন্স ও ড্যাপার বেসপোক সবচেয়ে ব্যয়বহুল। রেডিমেড ফরমাল শার্ট ও স্যুটের ক্ষেত্রে অনেক কম সময়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছে রিচম্যান। তবে তরুণদের সেরা পছন্দে অভিনব কালেকশনের ক্যাটস আইও খুব একটা পিছিয়ে নেই।

টেইলারিং শিল্পে বৈচিত্র্য ও দেশব্যাপী বহুল উপস্থিতি শীর্ষস্থানে নিয়ে এসেছে টপ টেনকে। বৃহৎ পরিসরে দেখলে, সব থেকে পুরনো ও নির্দিষ্ট এলাকা কেন্দ্রিক স্টার টেইলার্সের নাম প্রায় পুরোটাই ছাপিয়ে গেছে স্বল্প সময়ে অধিক পরিচিতি পাওয়া বেলমন্ট।

যুগের হাওয়ার সঙ্গে বাকিগুলো তাল মেলাতে না পারলেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা স্বতন্ত্র অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।